আপনি পড়ছেন

ঘড়িতে তখন ঠিক ১২টা ১৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে এক দল শিক্ষার্থী। ব্যানারে রক্তের ছোপ ছোপ চিহ্ন। আর তাতে লেখা স্টপ জেনোসাইড ইন মিয়ানমার (মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ কর)। সবাই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে মৌন প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

jaynal vai du campus

এমন সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্তর থেকে গণহত্যা বন্ধ কর, জাতিসংঘ নিরব কেন? 'মিয়ানমারে শান্তি আনো, জাতিসংঘ বিচার কর' স্লোগান দিতে দিতে কলা ভবন এলাকায় প্রবেশ করলো একটি উচ্চ কণ্ঠসর। কণ্ঠে ঝাঁঝালো প্রতিবাদ। বড় কোন মিছিলে বিরামহীন স্লোগান দেয়ার অভ্যস্ত এমন প্রমাণ মেলে তার স্লোগান শুনলেই।

কিন্তু দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদে যখন ওই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটি শোনা যাচ্ছিল তখন স্লোগান ধরার মত পিছনে কোন জনতা নেই। নেই লম্বা লাইন কিংবা ব্যানার। তবুও একা একাই তিনি স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। জনে জনে প্রতিবাদের বাস্তবায়নের চিত্রই যেন তখন ফুটে ওঠেছিল।

তিনি এসে থামলেন অপরাজেয় বাংলার সামনে, যেখানে ব্যানার হাতে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করছেন শিক্ষার্থীরা সেখানে। নিঃশব্দ পরিবেশে মেশিন গানের মত তিনি কথার বুলেট ছুড়তে শুরু করলেন।

বলে চললেন, সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আজ বিশ্ব এক ভয়াবহ সময় পার করছে। মিয়ানমারে গণহত্যা চললেও শক্তিশালী দেশগুলো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা পারমাণবিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্রে নিজেদের গুদাম ভরেছে। এখন অস্ত্র বিক্রির পায়তারা করছে।

প্রিয় দেশবাসী, বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো যখন নিরব। তখন বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশের সরকার মানবতার পরিচয় দিয়েছে। সারা বিশ্ব আজ অন্য এক বাংলাদেশকে চিনলো। যেখানে সবাই পিছু হেঁটেছে সেখানে বাংলাদেশ সাহসের পরিচয় রেখেছে।

প্রিয় বিশ্ববাসী, আজ গণহত্যা বন্ধ না করে যুদ্ধ লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। পারমাণবিক অস্ত্রে নিজেদের গুদাম ভরে রাখা দেশগুলো তাদের অস্ত্র বিক্রির পায়তারা করছে। এই জঘন্য ষড়যন্ত্রকে আমরা ধিক্কার ও নিন্দা জানাই।

নিজের বক্তব্য শেষ হতেই তিনি কারো জন্য কোন অপেক্ষা না করে চলে গেলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সবার পরিচিত মুখ। নাম জয়নাল ভাই। সবাই তাকে অর্ধ-পাগল হিসেবেই জানে। তিনি নিজে বিভিন্ন সময় একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা ও ‘জাতীয় নেতা জয়নাল ভাই’ বলে দাবি করেন। তার অখ্যাত দলের তিনিই একমাত্র সদস্য এবং স্বঘোষিত সভাপতি!

সবাই তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বললেও তিনি যেন একবিংশ শতাব্দির মুর্দা ফকির। আমরা কবর নাটকে একজন মুর্দা ফকির সম্পর্কে জেনেছিলাম। যিনি ৪৬ সনের দুর্ভিক্ষে তার পরিবার পরিজন হারিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি গোরস্থানে সময় কাটাতেন।

তৎকালীন পাকিস্তান প্রশাসন ভাষার দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের লাশ গোপনে রাতের আধারে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে দাফন করে ফেলার পায়তারা করলে মুর্দা ফকির বাধা দান করেন।

ইতিহাসের সেই মুর্দা ফকির চরিত্র যেন আবার ফিরে এসেছেন জয়নাল ভাই রূপে। যিনি রোহিঙ্গাদের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকার পথে প্রান্তরে স্লোগান তুলে এবং চোখ খুলে দেয়ার মত বক্তব্য প্রদান করে বিশ্ববাসীর ঘুম ভাঙ্গাতে ডেকে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তবুও কি ঘুম ভাঙবেনা বিশ্ববিবেকের? মানুষ এবং মানবতার প্রশ্নে কি কখনোই ঘুম ভাঙবে না বিশ্বের? নাকি জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে এই শতাব্দি? বিংশ শতাব্দীর হিটলার কি তবে নতুন নামে নতুর রূপে একবিংশ শতাব্দিতে ফিরে এসেছে?

লেখক: সাংবাদিক
This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর