'অচল অধিনায়ক' মুশফিক, দায় কার?

‘টিম ম্যানেজমেন্ট’ কি তবে একটা ভূতের নাম? যা মুশফিকুর রহিমের কাঁধে চেপে বসছে এবং অধিনায়ক হিসেবে তার ব্যক্তিত্ব ও কর্তৃত্বকে গিলে খাচ্ছে? আপাত দৃষ্টিতে এর বাইরে কিছু মনে হচ্ছে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এক দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে ফেলেছে ৪২৮ রান। তাও মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে। এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ যে চলে গেছে অনেক দূরে, সেটা বুঝতে ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই।

খেলায় এমন হতেই পারে। কিন্তু দিন শেষে যখন অধিনায়ক নিজেকে সংবাদ সম্মেলনে এলেন এবং অপ্রত্যাশিত অনেক কথা বললেন; তখন স্পষ্ট হয়ে গেলো প্রোটিয়াদের কাছে এমন বিপদে পড়ে যাওয়ার কারণ স্রেফ মাঠের ব্যর্থতা নয়। মাঠের বাইরের, আরো বিশেষ করে বললে ড্রেসিংরুমের অনেক কিছুর প্রভাব আছে মাঠের এই দুরাবস্থার উপর।

প্রথম দিনের অনেকটা সময় সীমানার কাছাকাছি ফিল্ডিং করেছেন মুশফিক। অথচ অধিনায়কের ফিল্ডিং করার কথা এমন একটা জায়গায়, যেখান থেকে পুরো দলের উপর নির্দেশনা দেয়া সহজ হয়, বলে বলে বোলারকে নির্দেশনা দেয়ার মতো কাজ করা যায় অনায়াসে। কিন্তু মুশফিক কেনো সীমানায় দাঁড়িয়ে রইলেন?

দিনের খেলা শেষে মুশফিককে যখন এমন প্রশ্ন করা হলো, উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি ফিল্ডার হিসেবে খুব একটা ভালো না। কোচরা চেয়েছেন বাইরে ফিল্ডিং করি। সামনে থাকলে আমার হাত থেকে নাকি রান হয়ে যায়। ক্যাচ উঠলে নাকি সুযোগ থাকে না ধরার। টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা বলবে, সেটাই তো করতে হবে। বেশির ভাগ সময়ই তাই থেকেছি বাইরে। মাঝে মধ্যে ভেতরেও থেকেছি। তখন চেষ্টা করেছি বোলারদের পরামর্শ দিতে।’

মুশফিকের মন্তব্যের প্রতিটি বাক্যে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব। অধিনায়ক হিসেবে তার যেনো করার কিছুই নেই! এর দায় কার, স্বয়ং মুশফিকের? নাকি ওই ‘টিম ম্যানেজমেন্টের’?

মুশফিককে যখন টেস্ট দলের অধিনায়ক করা হয়, তখন প্রতিটি খেলোয়াড়কে আলাদা আলাদা করে চিরকুট লিখে নানা নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে মুশফিক যে আলাদা কিছু করতে চান, সেই প্রচেষ্টার ছাপ ফুটে উঠেছিলো তখনই। কিন্তু দিনে দিনে মুশফিক যে প্রায় ‘অচল অধিনায়কে’ পরিণত হলেন, একেবারে এলোমেলো অধিনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন, দলকে করে দিলেন অগোছালো; এর দায়টা কার?

বাংলাদেশ দলে শ্রীলঙ্কান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে যে প্রায় সর্বময় ক্ষমতাবান, এটা তো জানা কথাই। কিন্তু কোচের ক্ষমতা অধিনায়কের ক্ষমতাকে খর্ব করছে কিনা, এ রকম বিষয় এখন বোর্ডের খতিয়ে দেখা উচিত। অধিনায়ক যখন প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে এভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, তখন বোঝা যায় যে, তিনি আসলে এর চেয়েও বেশি অসহায় হয়ে উঠেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড়ে চাপা পড়ার শঙ্কাটা যতোই বড় হোক, আপাতত অধিনায়কের এমন অসহায় হয়ে যাওয়ার চেয়ে সেই ব্যাপারটা বড় নয়।