‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কবি হেলাল হাফিজকে বাস্তবে না চিনলেও সবাই তার রচিত নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়র এ লাইন দুটির সঙ্গে পরিচিত। আজ কবি হেলাল হাফিজের ৭০তম জন্মদিন। বাবার খোরশেদ আলী তালুকদার ও মা কোকিলা খাতুনের কোল আলো করে ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন এই গুণী মানুষটি। তার পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলায়। জেলা শহরেই কেটেছে কবির শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবন।

poet helal hafiz

দেশের শেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৯ সালে রচনা করেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি। গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত এই কবিতাই তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে। তবে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত এই কাব্যগ্রন্থ হেলাল হাফিজকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে।

কবি হেলাল হাফিজ নাকি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ এত জনপ্রিয় হওয়ার ভয়ে আর কবিতার বই প্রকাশ করেন নি। পরের কবিতাগুলো যদি জনপ্রিয়তা না পায়! এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করছেন তিনি ‘অল্প লিখে গল্প হয়েছেন’। তার পেশাও অদ্ভূত। আর ছিলেন অতিমাত্রায় অলস। অলসতার কারণেও কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি তার।

সাহিত্য কর্ম: তবে আশার কথা অলসতা ভেঙে কবি বেড়িয়ে এসেছেন। যে জলে আগুন জ্বলে প্রকাশের ২৬ বছর পর ২০১২ সালে প্রকাশ হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তার অন্যান্য লেখার মধ্যে রয়েছে- ভালবেসো একশো বছর, বেদনাকে বলছি, কেঁদোনা এবং আজ কবিতার জনসভা। বর্তমানে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইবুকেও বেশ সক্রিয় ও জনপ্রিয়।

শিক্ষা ও কর্মজীবন: তিনি ১৯৬৫ সালে নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন । সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার গল্প: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় দিতে গিয়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের হল ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার শিকার হতে হত। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে চারদিকে দেখতে পান শুধু লাশ আর লাশ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো পুরো হল।

অন্যদিকে ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানার জন্য সে দিন আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। হলের গেট দিয়ে বের হতেই কবি গুণের সঙ্গে দেখা। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন দুজনই। পরে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য চলে যান তারা।

পুরস্কার ও সম্মাননা: কবিতার জন্য তিনি একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), হাসান হাফিজুর রহমান সাহিত্য পুরস্কার, উত্তর আমেরিকা সাহিত্য পুরস্কার ও নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

কবির জন্মদিন উপলক্ষে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ নামে একটি সংগঠন আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র নামে অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এই কাব্যগ্রন্থর প্রতিটি কবিতা আবৃত্তি করা হবে। আজ (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে এই অনুষ্ঠান। জন্মদিনে ভক্ত ও অনুরাগীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন কবি হেলাল হাফিজ।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজ পেপারের পক্ষ থেকে কবির জন্য রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের দীর্ঘায়ু কামনা করছি আমরা।