বিকল্প ‘বাংলাদেশ দল’, যা হারিয়ে দিতে পারে মূল দলকেও

ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন জাতীয় দল থেকে দীর্ঘদিন আগে ছিটকে যাওয়া কয়েকজন ক্রিকেটার। যারা সুযোগ পেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও করতে পারতেন অবিশ্বাস্য কিছু। এমন কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়ে বানিয়ে ফেলা যায় আস্ত একটা ‘বিকল্প বাংলাদেশ’ স্কোয়াড, ঘরের মাঠে খেলা হলে যারা হারিয়ে দিতে পারেন মূল জাতীয় দলকেও!

এই বিকল্প দলের অনেকে হয়তো জাতীয় নির্বাচকদের ভাবনাতেও আছেন। পরের হোম সিরিজে হয়তো তারা ডাক পেয়ে যেতে পারেন জাতীয় দলে। চলুন ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্ম এবং আগে জাতীয় দলের পারফর্ম বিবেচনায় একটা ‘বিকল্প বাংলাদেশ দল’ গঠন করে ফেলা যাক!

ওপেনিং জুটি
শাহরিয়ার নাফীস এবং এনামুল হক বিজয়। এ দুজন হলেন বিকল্প বাংলাদেশ দলের ওপেনিং জুটি। ছোট একটা অস্ত্রোপচারের কারণে নাফীস যদিও চলতি জাতীয় লিগ খেলছেন না, কিন্তু তিনি আছেন ফর্মের তুঙ্গেই। ১০২ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার সেঞ্চুরি ১৩টি। রান করেছেন ৪০-এর উপর গড়ে। সবশেষ প্রিমিয়ার লিগের ১৬ ম্যাচে ৬০০ রান করেছেন তিনি। গত জাতীয় লিগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪০৩ রান। গড়ে রান তুলেছেন ৪০-এর উপরে। তার চেয়েও বেশি গড়ে অনেকে রান করেছেন বটে, কিন্তু জাতীয় দলের আগের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় নাফীস বিকল্প দলের প্রথম ওপেনার। দলের অধিনায়কও। নাফীস কেমন অধিনায়ক— তা হয়তো ক্রিকেট সমর্থকদের জানা নয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, নাফীসকে এক সময় বাংলাদেশ দলের সম্ভাব্য অধিনায়ক মনে করা হতো। বাংলাদেশ যে প্রথম টি-টোয়েন্টি তার নেতৃত্বেই খেলেছে, এটাও কিন্তু স্মর্তব্য।

দ্বিতীয় ওপেনার এনামুল হক বিজয়, অনেক দিন ধরেই যিনি টেস্টের বাইরে, চলতি জাতীয় লিগ খেলতে নেমেই হাঁকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। প্রিমিয়ার লিগে ১৬ ম্যাচে করেছেন ৫৯৬ রান। গড়ে রান তুলেছেন ৩৭-এর উপরে। উইকেটকিপিংটাও থাকবে বিজয়ের হাতে।

ব্যাটিংয়ের তিন স্তম্ভ
নাঈম ইসলাম, তুষার ইমরান ও অলোক কাপালি। সবশেষ ১১ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নাঈম সেঞ্চুরি করেছেন ছয়টি। এর মধ্য সবশেষটি আবার তার ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। সঙ্গে আছে আগে আটটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা। বিকল্প দলের ওয়ান ডাউনে নাঈম একজন সেরা পছন্দ। ঘরোয়া লিগ মানেই তুষার ইমরানের ব্যাটে রানের বন্যা। তার টেস্ট খেলার স্মৃতি হয়ত তার নিজের কাছেই ফিকে হয়ে গেছে। তুষার সবশেষ টেস্ট খেলেছেন ১০ বছর আগে। কিন্তু তার বয়স এখন ৩৩; মানে সময়টা ফুরিয়ে যায়নি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের। গত জাতীয় লিগে ৮০-এর উপরে গড়ে রান করা এই ব্যাটসম্যান এবারও তিন ম্যাচে তিন হাফ সেঞ্চুরি ও এক সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন!

নাঈম ও তুষারের তুলনায় অলোকের সাম্প্রতিক পারফর্ম কিছুটা ফিকে। তবে মনে রাখতে হবে গত জাতীয় লিগে তিনি সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন। করেছিলেন দুটি সেঞ্চুরি। এ ছাড়া আগে ১৭ টেস্টের অভিজ্ঞতাও বিবেচ্য ব্যাপার।

দুই অলরাউন্ডার
সোহরাওয়ার্দি শুভর ক্রিকেটার সত্তার ক্ষমতাকে কখনোই মনে হয় বাংলাদেশ ঠিক টের পায়নি। তার মতো একজন খেলোয়াড় কেনো শুধুমাত্র একটি টেস্ট খেলেই বাদ পড়েছেন, তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। ৮০টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচে সোহরাওয়ার্দি রান করেছেন গড়ে ৩৩-এর উপরে। হাফ সেঞ্চুরি ২১টি, সেঞ্চুরি তিনটি। চতুর্থ সেঞ্চুরিটি তিনি করেছেন চলমান জাতীয় লিগের চতুর্থ রাউন্ডে। বল হাতে নিয়েছেন ৩০৫টি উইকেট। ইনিংসে পাঁচ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন ২০ বার!

ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্ম এবং অতীত অভিজ্ঞতার বিবেচনায় বিকল্প দলের দ্বিতীয় অলরাউন্ডার অবশ্যই ফরহাদ রেজা। জাতীয় দলে তার পারফর্ম হয়তো খুব বেশি ভালো ছিলো না। টেস্ট তো খেলেনইনি। ইদানিং ব্যাট হাতেও উজ্জ্বলতা ছড়াতে ব্যর্থ ফরহাদ। কিন্তু তিনিই যে বাংলাদেশের ঘরোয়া পর্যায়ে ‘সফলতম’ পেস বোলিং অলরাউন্ডার! গত লিগে ২৩ উইকেট নেয়া ফরহাদ এবার চার রাউন্ড শেষে নিয়েছেন ১২ উইকেট। এর মধ্যে ইনিংসে তিনটি করে নিয়েছেন তিনবার।

চার বোলার
আব্দুর রাজ্জাক, সাকলাইন সজিব, আল আমিন হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। আব্দুর রাজ্জাকের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বোধহয় বিশেষ কোনো ব্যাখ্যার দরকার নেই! বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ স্পিনার কেনো জাতীয় দল থেকে বছরের পর বছর বাইরে আছেন, তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। তেমনই বিস্ময়কর ব্যাপার হলো সাকলাইন সজিব কেনো জাতীয় দলে কখনো প্রতিষ্ঠা পেলেন না! ৮২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে এই বোলারের উইকেট ৩৪২টি। শুধু এই রেকর্ডের কারণেই বিকল্প বাংলাদেশ দলে তার জায়গাটা নিশ্চিত।

আল আমিন হোসেন বাংলাদেশের অন্যতম দুর্বোধ্য পেসার। গতি ও টপ বাউন্স এবং অপ্রথাগত অ্যাকশন; সব মিলিয়ে আল আমিন অবশ্যই এই দলে সুযোগ পান। কামরুল ইসলাম রাব্বির এই দলে অন্তুর্ভুক্ত হওয়া হয় হয়তো বিতর্কিত ব্যাপার হতে পারে। কিন্তু ফিটনেস, টানা বল করে যাওয়ার ক্ষমতা; সব মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়ার জন্য রাব্বি একটা দারুণ প্যাকেজ। এ ছাড়া জাতীয় দলে তিনি খুব বেশি সুযোগও পাননি।

বিকল্প বাংলাদেশ একাদশ
শাহরিয়ার নাফীস (অধিনায়ক), এনামুল হক বিজয়, নাঈম ইসলাম (সহঅধিনায়ক), তুষার ইমরান, অলোক কাপালি, সোহরাওয়ার্দি শুভ, ফরহাদ রেজা, আব্দুর রাজ্জাক, সাকলাইন সজিব, আল আমিন হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।