অসুস্থ সাফার পাশে দাঁড়িয়ে প্রবাসী সুমনের মানবতার জয়গান

ফুটফুটে কিশোরী ফারজানা আক্তার সাফা। সবে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে। পৃথিবীর রূপরস ঠিকমতো উপভোগ করার আগেই শরীরে বাসা বেঁধেছে এক মরণব্যাধি। নষ্ট হয়ে গেছে শরীরের দুটো কিডনি। তার চিকিৎসা করাতে প্রয়োজন লাখ লাখ টাকা।

অসুস্থ সাফার হাতে বিশ লাখ টাকার চেক তুলে দিচ্ছেন প্রবাসী মিজানুর রহমান সোহেল

এমন মানবিক আবেদন মাঝে মধ্যেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়। অনেকে শেয়ার বা হৃদয়গ্রাহী মতামত দিয়েই চুপ থাকেন। তবে কেউ কেউ আছেন যারা এসব মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন উপকার করতে। এমনই একজন হচ্ছেন সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সুমন। যিনি সাফার বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন ২০ লাখ টাকার চেক।

ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে মিজানুর রহমান সুমন জানতে পারেন, কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার আল আমিন ইন্সটিটিউটের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ফারজানা আক্তার সাফার দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাফার চিকিৎসার জন্য বিশ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন।

চলতি সপ্তাহে তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অসুস্থ সাফার পরিবারের হাতে ২০ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন মিজানুর রহমান সুমন। এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন সাফা। সাফা বলেন, 'ডাক্তার বলেছেন চিকিৎসা করলে আমি সুস্থ হবো। আমার জন্য দোয়া করবেন।'

অসুস্থ সাফার মা খোরশেদা বেগম বলেন, 'মেয়ের ডায়ালাইসিস চলছে। তার দুটো কিডনিই বর্তমানে অকেজো। চিকিৎসা করাতে পারলে আশার আলো দেখছেন ডাক্তাররা। তবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। সুমন ভাই বড্ড উপকার করলেন।'

প্রবাসী মিজানুর রহমান সুমনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। প্রবাসীর ছোট ভাই খলিলুর রহমান মামুন বলেন, 'আমার ভাই সৌদি আরবে থাকলেও দেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা সবসময় থাকে। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ফোনে কথা হলে সবসময় এলাকার অসহায়-গরীবদের খোঁজ-খবর নেন। সাফার মতো অনেককেই সে সময় পেলে সহযোগিতা করে।'

তিন ভাই চার বোনের বড় পরিবার মিজানের। ভাইবোনদের মধ্যে মিজানের অবস্থান ছয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসী মিজানের এমন অনেক গল্প রয়েছে। অনেকে তাকে অসহায় গরিবদের বন্ধু নামেও চেনেন। মিজান বলেন, 'আমি আমৃত্যু মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে চাই। ছোট বেলা থেকেই মানুষের উপকার করতে আমার ভালো লাগে। তাই সাফার চিকিৎসায় আমার এ ক্ষুদ্রি প্রয়াস।'

সুমন সমাজের সকল সামর্থবানকে অসুস্থ, অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। মিজানদের মতো বিবেকবান তরুণরা অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসলে বদলে যাবে দেশ। বেঁচে থাকবে মানবতা।