মাশরাফির আনন্দের দিনে ছড়িয়ে পড়ছে যে বিষাদ

অধিনায়ক হিসেবে আজ তিনি খেলতে নামবেন ৫০তম ওয়ানডে। মাশরাফি বিন মর্তুজার আজ আনন্দে ভেসে যাওয়ার কথা। কারণ এই কীর্তি যে তার আগে গড়েছেন মাত্র দুজন বাংলাদেশি অধিনায়ক। কিন্তু আনন্দে ভেসে যাওয়ার বিলাসিতা দেখাতে পারছেন না মাশরাফি।

কারণটা বোঝা নিশ্চয় কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। উপলক্ষ্যটা আনন্দের হলেও মঞ্চ যে সেজে উঠেছে বিষাদের সব হারে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের দুই বিভাগের দুই অস্ত্র তামিম ইকবাল ও মোস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরি। সব মিলিয়ে মাশরাফির জন্য সময়টা এখন বড্ড খারাপ।

সেই খারাপের মাত্রা এতোটাই যে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলতে নামার আগে তার চিন্তার জগত দখল করে রেখেছে সেরা একাদশ বাছাই বিষয়ক দুশ্চিন্তা!

মোস্তাফিজ যে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারবেন না, সেটা নিশ্চিত হয়েছিলো আগেই। প্রথম ওয়ানডের আগের দিনের অনুশীলনের সময় ফুটবল খেলতে গিয়ে গোড়ালি মচকে যায় তার। তারপরও কোচ মোস্তাফিজকে রেখে দিয়েছিলেন কেবল শেষ পর্যন্ত দেখার আশায়। কিন্তু ফিজিও যে পরিস্থিতির আভাস দিয়েছেন, তাতে কোচ নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে এই সিরিজে আর সীমিত ওভারের জার্সি গায়ে দেয়া হবে না তার।

আর তামিমের সিরিজটাই তো গেলো ইনজুরির সঙ্গে কানামাছি খেলতে খেলতে। উরুতে প্রথম চোটটা যখন তিনি পান, তখন সিরিজের মূল পর্ব শুরুই হয়নি। টেস্টের আগের প্রস্তুতি ম্যাচে মাংসপেশীতে টান লাগে তার। সেই চোট পুরোপুরি না সারতেই নেমে পড়েন প্রথম টেস্ট খেলতে। পরিণতি যা হওয়ার, হয়েছে তাই; চোটটা আরো গুরুতর হয়েছে এবং দ্বিতীয় টেস্টে তামিম দলেই ছিলেন না। চোট কাটিয়ে তার ফেরা হয়নি প্রথম ওয়ানডেতেও। চোটটা পুরোপুরি না সারতেই নেমে পড়েন দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে— ফলাফল অন্তত ২৪ দিনের জন্য মাঠের বাইরে।

জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটি তো বটেই, তামিম খেলতে পারবেন না বিপিএলের প্রথম তিন চারটি ম্যাচও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খুব সম্ভবত ১৪ নভেম্বর মাঠে নামবেন তামিম।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামার আগে মাশরাফির কণ্ঠে ঝড়লো মোস্তাফিজ-তামিম না থাকার হতাশা। মাশরাফি বলেন, ‘এই দুজনকে না পাওয়াটা দলের জন্য বড় একটা আঘাত। যখন এমন দুজন দলে থাকবে না, তখন সেরা একাদশ নির্বাচন করা কঠিন। কারণ এরা সব সময় দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।’

এক দিকে দুই সেরা পারফর্মারের অনুপস্থিতি। অন্য দিকে একের পর দুঃসহ হারের ক্ষত। মাশরাফিরা সব মিলিয়ে পড়ে গেছেন পাহাড়সম চাপে। সেই চাপ দূর করার উপায়ও অবশ্য বলে রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘চাপ তো থাকবেই। সেটা আরো বেড়ে যাবে যখন আপনি পারফর্ম করতে পারবেন না। কিন্তু যদি পারফর্ম করা যায়, চাপ সামলে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলা যায়, তাহলে কিন্তু ভালো কিছু করা সম্ভব।’

ওয়ানডে সিরিজের পর দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তার আগে মাশরাফির আনন্দের উপলক্ষ্যে আপাতত ‘ভালো কিছুর’ দিকে তাকিয়ে আছেন সাকিব-মুশফিকরা। শেষ পর্যন্ত মাশরাফির আনন্দের দিনটা আরো গাঢ় বিষাদে ডুবে যাবে নাকি ধরা দিবে স্বস্তির উপলক্ষ্য?