মিরপুরে এলো অবিস্মরণীয় জয়

প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩০০-এর উপরে রান করলে বাংলাদেশ সাধারণত হারে না। এই সত্যটা মিরপুরে আরো একটু দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। বৃহস্পতিবার ভারতকে যে ওই সত্যের উপর ভর করেই হারিয়ে দিলেন মাশরাফিরা। বাংলাদেশ পেয়ে গেলো অবিস্মরণীয় এক জয়।

এ দিন প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করে ৩০৭ রান। ভারতের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। জবাবে ৩০৮ রান করতে গিয়ে অভিষিক্ত পেসার মুস্তাফিজের বিষাক্ত বোলিংয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় ভারতের ব্যাটিং লাইন। ভারত গুটিয়ে যায় ২২৮ রানে। বাংলাদেশ পায় ৭৯ রানের ঐতিহাসিক জয়।

বেশ কয়েকটি কারণে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই সিরিজটি একটু আলাদা। প্রথম কারণ হলো এই সিরিজে দুটি ম্যাচ জিতলে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা সুনিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং আরো কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হলো গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ওই ম্যাচে আম্পায়ারদের স্পষ্ট পক্ষপাতিত্বে কপাল পুড়ে বাংলাদেশের।

সিরিজ শুরুর আগে অবশ্য দুই অধিনায়কই বিশ্বকাপের ম্যাচটির কথা ভুলে যাওয়ার দাবি করেছেন। কিন্তু সমর্থকদের তা মানার সময় কই? সমর্থকরা মানেননি। মানেননি মুস্তাফিজ যখন পাঁচ উইকেট নিয়ে, ভারতের হার নিশ্চিত করে ফেলেছেন, মিরপুরের গ্যালারি থেকে তখন ভেসে আসছে মওকা মওকা আওয়াজ! দুটি ক্যাচ মিস করে মুশফিক যে প্রায় ভারতের হাতে ম্যাচ তুলে দিতে যাচ্ছিলেন, সেই ঘটনাও তখন প্রায় একশ বছর আগের ইতিহাস!

৩০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিং জুটিটা ভাঙা পর্যন্তই ভারত ম্যাচে ছিলো। তারপর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়তে থাকে তারা। ৯৫ রানে ধাওয়ানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন। ছয় রান পর কোহলিকে আউট করে ভারতের সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে দেয়ার কাজটা আরো দৃঢ় করেন তাসকিনই।

ভারতের ইনিংসের প্রথম বলেই রোহিত শর্মাকে সুইংয়ে ভড়কে দেন মুস্তাফিজ। পরের ওভারের প্রথম বলে রোহিত ধাক্কা খান তাসকিনের বলে। মুস্তাফিজ ও তাসকিন যেনো বদলে যাওয়া বাংলাদেশের শ্লোগান হয়ে আবির্ভুত হলেন এই ম্যাচে। ১০৫ থেকে ১১৫ রানের মধ্যে আরো দুই উইকেট হারায় ভারত। রোহিত শর্মা ও অজিঙ্কা রাহানেকে ফেরান মুস্তাফিজ। রাহানেকে আউট করা বলটি ছিলো কিছুটা ধীর গতির। গতিতে বিভ্রান্ত হয়ে আগেই ব্যাট চালান রাহানে। ক্যাচ উঠিয়ে দেন তিনি। কয়েক ফুট লাফিয়ে ক্যাচ নেন নাসির। মিরপুরের দর্শকরা কি ওই ক্যাচ বাকি জীবনে ভুলতে পারবেন?

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনের প্রথম চার স্তম্ভকে ফেলে দেয়ার পর বাংলাদেশের ভয় বলতে ছিলেন সুরেশ রায়না ও ধোনি। রায়না একটু দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু ধোনি কিছুই করতে পারেননি। মুস্তাফিজকে অসতর্ক মুহূর্তে ধাক্কা মেরে বিতর্ক সৃষ্টি করা ছাড়া এই ম্যাচে ধোনি ভারতের জন্য কিছু করারই সুযোগ পাননি আসলে। ধোনিকে বিদায় করেন সাকিব। আর রায়না স্ট্যাম্প হারান মুস্তাফিজের সর্পিল এক সুইংয়ে। ছয় উইকেট হারানো ভারতের হার তখন কেবলই সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত ২২৮ রানে থামে তাদের ইনিংস। মুস্তাফিজ নেন পাঁচ উইকেট। দুটি করে শিকার সাকিব ও তাসকিনের। মাশরাফির অবদান এক উইকেট।

গত বছরের জুনের ১৭ তারিখে অভিষেকেই ভারতকে চমকে দিয়েছিলেন তাসকিন। ২৮ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এক বছর পর তাদের ‘যম’ হয়ে আবির্ভাব ঘটলো মুস্তাফিজের। বাকি দুই ম্যাচে এই চিন্তাটাই হয়তো খেয়ে ফেলবে ভারতকে!

আপনি আরো পড়তে পারেন

সৌম্যর অসাধারণ ৫৬ মিনিট

ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড

ভাবনায় আছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও