ছেলেটি এমন কেনো? সবসময় খালি ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকে। ভাল লাগে না একদম, কোচিংও শান্তিতে করা যায় না। বাসায় যাওয়ার পথে চায়ের দোকানটাতেও বসে থাকবে আর ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকবে। সেভ করার টাকাও মনে হয় নেই তার। কিন্তু চোখ দুটো অনেক মায়াবী। যদি কোনো মেয়ে তার প্রেমে পরে তবে তার এই মায়াবী চোখের ই প্রেমে পরবে নিশ্চিত!

hold your hand

কোচিং থেকে ফেরার পথে এসব কথা ভাবছিল ফারজাহ। ছেলেটাকে তার খুব রহস্যময় মনে হয়। কোচিংয়ের সবচেয়ে শান্ত ছেলেও মনে হয় ওকেই বলা যায়। কারো সাথে কোনো কথা বলে না শুধু ফারজাহ’র দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। একেবারেই আজব! এসব ভাবতে ভাবতে চায়ের দোকানের কাছাকাছি এসে পরে ফারজাহ।

‘ওই যে দাঁড়িয়ে আছে মহাশয়।’ ফারজাহ চোখ তুলতেই দেখলো মায়াবি চোখ দুটো তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফারজাহ নিচের দিকে তাকিয়ে দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো।

বিকেলের কোচিং যেতে একটু দেরি হয়ে গেল ফারজাহর। পেছনের দিকে যেয়ে বসতেই দেখলো, পাশের সারির শেষ বেঞ্চে একা একা বসে আছে ছেলেটা। সে যথারীতি তাকিয়ে আছে অপলক। আচ্ছা, ছেলেটার কি কোনো বন্ধু নেই? কারো সাথে কথা বলে না কেন! বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসে ফারজাহর।

আজ আর দ্বিতীয় কোচিং ক্লাশ করবে না ফারজাহ। বাইরে দাঁড়িয়ে তার বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করছে। তার বান্ধবী এলেই তার সাথে গোলা খেতে যাবে। অনেক দিন ধরে খাওয়া হয় না। আর দ্বিতীয় কোচিংটা ভাল লাগে না কেন জানি, হয়ত ছেলেটা ওই কোচিংও করে না তাই। এসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ ছেলেটিকে কোচিং থেকে বের হতে দেখলো । একটু দূরে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর ফারজাহ খেয়াল করলো ছেলেটা তার দিকে এগিয়ে আসছে । তবে কি আজ ছেলেটা কথা বলবে! যা গত তিন মাসে হয়নি, তা কি আজ আসলেই হবে! ছেলেটা তার খুব পাশে এসে দাঁড়ালো আর একটা কাশি দিয়ে বললো
- আপনাকে খোলা চুলে খুব সুন্দর লাগে!
- মানে?
- ‘আপনার চুলগুলো অনেক বড় তো.. তাই আপনাকে খোলা চুলে অনেক সুন্দর লাগে। ওভাবে খোপা বেঁধে রাখবেন না।’ বলেই চলে গেল ছেলেটা।

ফারজাহ খুব অবাক হলো ব্যাপারটায়। যেই ছেলেটা তাকে ৩ মাস ধরে নিয়মিত দেখেই যাচ্ছে, সেই ছেলের সাথে প্রথম কথা এমন হবে সে কখনো ভাবতেও পারেনি। এই সময় তার বান্ধবী ইশরাত আসলো:


- দেরি হয়ে গেল রে। কিছু মনে করিস না। ম্যাডাম শিটগুলা খুঁজেই পাচ্ছিল না। এখন চল গোলা খেতে যাই...(ইশরাত)
- নারে আজ আর যাব না। শরীরটা ভাল লাগছে না। (ফারজাহ)
- ওমা তুই না বল্লি, আজ ২য় কোচিংটা করবি না। গোলা খেতে যাবি। এখন আবার কী হলো?
- হঠাৎ করেই শরীরটা খারাপ লাগছে।
- ফারজাহ তোকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে । বলতো কী হয়েছে?
- আরে তেমন কিছুই না।
- ফারজাহ তুই আমার কাছে লুকাবি?
- আসলে...আচ্ছা ইশরাত, আমাদের সাথে একটা ছেলে এই কোচিং এ ভর্তি হয়েছিল।
- কোন ছেলেরে??
- আরে বোকার মতন। সবসময় একা একা বসে। কারো সাথে কথা বলে না।
- ও হ্যাঁ।
- ওর নাম কিরে?
- রাফসান। যে তোর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে! আর তোদের বাসায় যাওয়ার পথের চায়ের দোকানটাতেও বসে থাকে।
- আরে হ্যাঁ।
- তো এত দিন পর অর নাম জানতে চাইলি কেন? প্রোপজ করেছে নাকি?
- আরে ধুরু তেমন কিছু না।
- তাহলে কী করেছে? উল্টাপাল্টা কিছু করে থাকলে বল । রাজীবকে দিয়ে এলাকা ছাড়া করবো। তুই তো জানিসই ও আমার কথায় উঠে বসে।
- আচ্ছা তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? অমন বোকা একটা ছেলে কেন কিছু করবে?
- বলা তো যায় না। এখনকার ছেলেদের বিশ্বাস নেই!
- আরে ও এমন কিছু করেনি।
- আচ্ছা, গোলা খেতে চল; নয়ত আমি রাজিবের সাথে দেখা করবো।
- আচ্ছা আজ দেখা কর। আমার মাথাটা ব্যাথা করছে। আমি গেলাম...
- ঠিক আছে। সাবধানে যাস। আল্লাহ হাফেজ।

foreign marrige

ইশরাত এর কাছ থেকে বিদায় নিয়েই হাঁটা শুরু করলো ফারজাহ। প্রথম কোচিং এর পর দ্বিতীয় কোচিং শেষ করে যাওয়ার পথে চায়ের দোকানে সেই মহাশয়ের সাথে আবার দেখা! কিন্তু আজ তো দ্বিতীয় কোচিংটা করা হলো না, আবার আজ যে কাণ্ড করলো দেখা কি তাদের আদৌও হবে! কিন্তু ফারজাহ নিজে থেকেই চাচ্ছে তাদের দেখা হোক। কিন্তু কেন! সেই প্রশ্নের উত্তর ফারজাহর নিজেরও জানা নেই। এসব ভাবতে ভাবতে দোকানের কাছে আসতেই দেখতে পেল রাফসানকে। কিন্তু ফারজাহ বুঝতে পারলো রাফসান তার দিকে এগিয়ে আসছে। ফারজাহ খুব অবাক হচ্ছে। যে ছেলে ৩ মাস শুধু দেখেই কাটিয়ে দেয় সেই ছেলে একদিনে কি দুইবার কথা বলবে! হঠাৎ আবিষ্কার করলো, কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। পেছনে তাকাতেই রাফসান তার কাছে এসে বলা শুরু করলো:

- আপনাকে না বলেছি। চুল খুলে রাখবেন এখনও খুলেননি কেন?
- আপনি কি আমাকে বলছেন?
- আপনার সামনে দাঁড়িয়ে অন্য কাউকে বলবো নাকি?
- কিন্তু আপনি তো মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন। আমি বুঝবো কিভাবে?
- কিছু কথা না হয় মাটির কাছ থেকেই শুনে নিলেন। সমস্যা তো নেই!
- আচ্ছা আপনি কি পাগল? মাটির সাথে কি কথা বলা যায় নাকি?  আর গত ৩ মাস ধরে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন কেন?
- হ্যাঁ। আমি পাগল এর জন্যই তাকিয়ে থাকি।
বলেই উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করলো রাফসান। ফারজাহ খুব অবাক হলো। আসলেই অনেক রহস্যময় একটা ছেলে। ৩ মাস ধরে দেখে যাচ্ছে আর কথা বলার সময় মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবে। উফফ! কিছু ভাললাগেনা। ফারজাহ সেই দিন তার মাথা থেকে রাফসানের ব্যাপারটা সরাতে পারলো না। ঘুমটাও ভাল হলো না।

এভাবে আরো কিছুদিন চলে গেল। রাফসানের তাকিয়ে থাকাটা নিয়মিত চলতে থাকলেও কথা বলাটা হয়নি। আর তাকিয়ে থাকাটা কেন জানি ফারজাহর ভালোই লাগে। সে ভাবে একদিন নিজ থেকে কথা বলবে আর বন্ধুত্ব করবে। কালকেই কাজটি করবে। এসব ভাবতে ভাবতে সে খেয়াল করে জানালার কাছে চাঁদের আলো এসে পড়ছে। কেন জানি তার চাঁদের আলো খুব ভাল লাগে। চাঁদের আলোর এই স্নিগ্ধতার মাঝে সে নিজেকে প্রশ্ন করে- `সে কি রাফসান কে ভালবেসে ফেলেছে?'।

পরের দিন খুব ভেবেচিন্তে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কলেজে গেল। কিন্তু কলেজে কোনোভাবেই মন বসাতে পারলো না। একটা ক্লাশও ভালোমতো করতে পারলো না। মাথায় খালি রাফসানের কথাই আসছে, কিন্তু কেন? বন্ধুত্বের জন্য মেয়েদের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা একটু অন্যরকম দেখায় তবু যে ছেলেটির বন্ধু বলতে কেউ নেই, তার সাথে বন্ধুত্ব করাটা কি খুব খারাপ দেখায়। নাহ এত অস্থির লাগছে কেন।

ক্লাশ শেষে বাসায় এসে হাত মুখ ধুয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসে ফারজাহ। খাওয়া শেষ করে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে বের হয় কোচিংয়ের জন্য। কোচিংয়ে ঢুকবার আগে সে বুঝতে পারে আজও সে খোপা বেঁধে রেখেছে। আনমনে একটি হাসি দিয়ে খোঁপা খুলে ফেলে। তার এই কোমর ছাড়া চুল দেখে যে কেউ প্রেমে পরে যেতে পারে।

ভেতরে যাওয়ার পর খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেল না। তার মানে, আজ কি সে কোচিং করতে আসেনি?

হঠাৎ দেখলো ছেলেটি এসেছে। কিন্তু আজ তাকে খুব বিষন্ন দেখাচ্ছে। কোচিংয়ের মাঝে আর কথা বলবে না। একবারে চায়ের দোকানে সামনে ডাক দিয়ে কথা বলবে। এভাবে ১ম ও ২য় কোচিং শেষের পর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে আবার সেই চায়ের দোকান। হ্যাঁ, সে আজো দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে ভাবতে ছেলেটার দিকে এগিয়ে যায় ফারজাহ। কিন্তু এটা কী হচ্ছে তার চোখের সামনে। তার নিজের দু'চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। রাফসানের নাক বেয়ে রক্ত পড়ছে। রাফসান যখন বুঝতে পারলো হাতের রুমালটা নাকে চেপে দৌড় দিল। ফারজাহ খুব অবাক হলো ব্যাপারটায়। তার দু' হাঁটু কাঁপছে। এইমাত্র ঘটে যাওয়া ব্যাপারটার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না। ফারজাহর খুব মাথা ঘুরছে। বাসায় গেল। কেন জানি সব কিছু খুব এলোমেলো লাগছে কোনোভাবেই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না ফারজাহ। রাফসানের কি তাহলে কোনো মরণব্যাধি রোগ!

পরের দিন কোচিংয়ে গেল কিন্তু রাফসান কে পেল না। এতদিনের মাঝে এই প্রথম রাফসানকে কোচিংয়ে দেখা গেল না। বাসায় যাওয়ার পথে চায়ের দোকানেও দেখা গেল না। খুব অবাক লাগছে ফারজাহর। খারাপ কিছু হলো না তো!

সারা রাত ঘুমাতে পারে না ফারজাহ। আচ্ছা, রাফসানের জন্য সে কেন ঘুমাতে পারছে না। তার মানে কি? হ্যাঁ, সে রাফসানকে ভালবাসে।

এভাবে দুই সপ্তাহ চলে গেল। ফারজাহ দু' চোখের নিচে যনে কালি পড়তে শুরু করে দিয়েছে। আজ কোচিংয়ে যাচ্ছে শেষবারের মত। এই মাসের বেতনটা দিয়ে ফিরে আসবে। আর যাবে না। কোচিংয়ের শুরুতে হঠাৎ ইশরাতের সাথে দেখা।
- কিরে কেমন আছিস? আজ কিন্তু ২য় কোচিং করবো না।
- কেন?
- গোলা খেতে যাব আর তোর সাথে জমিয়ে কথা বলাও হয় না বহুদিন।
- কিন্তু আমার শরীর যে ভাল নেই। এই মাসের বেতনটা চুকিয়ে আর আসবো না কোচিংয়ে।
- মানে!! ফারজাহ সত্যি করে বল কী হয়েছে। তোর চোখের নিচেও কালি। ঘুমাস না ঠিকমত?
- আরে তেমন কিছু না চল। কোচিংয়ে ঢুকি...

কোচিং শেষে সবাই চলে যাবার পর সে যখন বেতনটা দিতে গেল । দেখলো তাদের থেকে বড় একজন অন্য ছাত্রের বেতন দিতে এসেছে। ছাত্রের নাম জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো। তাহমিদুল কবির রাফসান। নামটা শুনেই ফারজাহ বুকে একটা ধাক্কা লাগলো। কোচিং থেকে বের হয়েই ফারজাহ লোকটিকে ডাক দিল।
- শুনুন
- জ্বী বলো।
- আপনি কি রাফসান এর বন্ধু? ও কোথায় কেমন আছে?
- আমি আসলে রাফসানের বড় ভাই। তুমি কি রাফসানের বন্ধু?
- আমি ফারজাহ, ওর সাথে এই কোচিংয়ে পড়ি।
- ও তুমিই তাহলে ফারজাহ। তোমার কি সময় হবে কিছু। আমার তোমাকে কিছু বলার এবং দেখানোর আছে।
- জ্বী অবশ্যই।
ফারজাহ ইশরাতকে নিয়ে রাফসানের বড় ভাইয়ের সাথে তাদের বাসায় গেল।

dhrubo khan ধ্রুব খান

এখন তারা রাফসানের রুমে আছে। ফারজাহ রীতিমতো অবাক। কারণ রাফসানের রুম জুড়ে শুধু তার ছবি আঁকা। এই কয়েক মাসে যত দিন দেখা হয়েছে প্রতিদিনের ছবি সে খুব সুন্দর করে একে দেয়ালে লাগিয়ে রেখেছে। প্রত্যেকটি ছবির নিচে একটি করে কথা লিখা। তাদের শেষ দেখার দিনটিতে ফারজাহ লাল রঙের একটা ড্রেস পরেছিল। রাফসান সেই রং দিয়ে খুব সুন্দর করে তার ছবি এঁকে রেখেছে আর নিচে লিখে রেখেছে "ইচ্ছে ছিল হাত ধরার"।

রাফসানের বড় ভাই বলা শুরু করে-
`ছোটবেলা থেকেই রাফসান চুপচাপ স্বভাবে একটা ছেলে ছিল। কখনো কারো সাথে ঝগড়া রাগ করতো না। সবার অনেক পছন্দের ছিল। অর বন্ধু বলতে ছিলাম কেবল আমি। আব্বু একদিন হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যায়। এর কিছুদিন পর আম্মুও মারা যায়।  এরপর একা হয়ে পড়ি আমরা দুজন। বাড়িতে একাই থাকতো রাফসান। আমি বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকতাম। রাতের খাবার এর সময় আমরা একসাথে খেতাম সেই সময় টুকিটাকি সব কথাই বলতো ও।একদিন তোমার কথাও বলেছিল। আমি একদিন ঠাট্টা করে বলেছিলাম
- তোর কোচিং এ যাব তাকে দেখতে? নাকি পিক-টিক তুলেছিস?
ও আমাকে নিজের হাতে আঁকা তোমার ছবিটি দেখিয়েছিল। তাই আমি তোমাকে প্রথমে দেখেই চিনেছিলাম কিন্তু না চেনার ভান করেছি, কারণ রাফসান চায় না তুমি তার আসল সত্যটা জানো।

একদিন খাওয়ার টেবিলে হঠাৎ রাফসানের নাক দিয়ে রক্ত পরা শুরু হয় ব্যাপার টাতে আমি খুব অবাক হই পরের দিন আমাদের পরিচিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে সে বলে `রাফসান ক্যান্সারে আক্রান্ত'। সঠিক চিকিৎসা হলেও বাঁচানোর নিশ্চয়তা দেওয়াটা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

বাসায় ফেরার পর রাফসান আরো চুপচাপ হয়ে যায় সারাদিন ছবি আঁকাই ছিল তার একমাত্র কাজ। কিন্তু কিছুদিন আগে তোমার সামনে যখন তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। সে খুব ভয় পেয়ে যায় এবং ওর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং এখনো সে হাসপাতালেই আছে। হয়ত আব্বু-আম্মুর কাছে যাওয়ার সময় এসেছে ওর।

ফারজাহ বাসায় যাচ্ছে। আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। আকাশে একটা চাঁদ উঠেছে কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে চাঁদটা কোনো আলো দিচ্ছে না। ফারজাহ কেন জানি কাঁদছে না। সেদিনও কাঁদেনি, যেদিন তার সামনে রোড এক্সিডেন্টে নিহত হওয়া তার বাবা মার লাশ রাখা হয়েছিল। কিন্তু কষ্টটা একি হচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব আপন কেউ তার কাছে আসতে চেয়েও আসতে পারলো না। 

২ মাস পর
ফারজাহ বসে আছে তাদের এলাকার কাছে এক নদীর পাড়ে। অনেক বাতাস সেখানে। ফারজাহ চুলগুলো ক্রমাগত উড়ছে। কিছুক্ষণ পর।
- এই যে আমার কেশবতী। কেমন আছেন?
- উফফ রাফসান আবার লেট?
- স্যরি, ভাইয়াকে একটু অফিসে নামিয়ে দিয়ে এলাম। চলো ওদিকটায় একটু হেঁটে আসি।
- চলো।
- ফারজাহ, ইচ্ছে ছিল তোমার হাতটি ধরার।
- ধরতে দিব কিন্তু সবসময় ধরে রাখতে হবে।
- যে হাতটি ধরার জন্য বেঁচে আছি সে হাত কী করে ছাড়ি বলো?
- ভালবাসি
- আমিও। অনেক অনেক অনেক...

রাফসানকে হাসপাতালে নেওয়ার কিছুদিন পর। ফারজাহ একদিন রাফসানকে দেখতে যায় কিন্তু ফারজাহ জানতো না তাকে দেখলে রাফসানের অবস্থা আরও খারাপ হবে। রাফসান ফারজাহকে দেখে অনেক অস্থির হয়ে যায় একসময় তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরে। ডাক্তার এসে বলে এখনি অপরেশন করাতে হবে। রাফসানকে অপরেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। ফারজাহ ভেবেছিল নিয়তির কাছে সে হেরে গেছে। রাফসান আর ফিরবে না। কারণ তার বাঁচার সম্ভাবণা একদম নেই, কিন্তু অপারেশনটা সাকসেস হয়। আজ ফারজাহর বিধাতার কাছে কোনো অভিমান নেই। তার ভালবাসাটা সত্যি ছিল এবং ভালবাসা সত্যি হলে Miracle Will Definitely Happen...