অথচ এই শট আগে খেলেননি জহুরুল!

ম্যাচ জিততে তখন ঢাকা ডায়নামাইটসের দরকার চার রান। হাতে আছে মাত্র দুটি বল। ব্যাটিংয়ে জহুরুল ইসলাম অমি। আর বোলার কার্লোস ব্রাফেট, শেষ ওভারের আগের চার বলে যিনি খরচ করেছেন মাত্র দুই রান। ঢাকার সমর্থকরা তখন নিশ্চিতভাবেই উত্তেজনায় কাঁপছিলেন। উত্তেজনায় কাঁপাকাঁপি চলছিলো খুলনার দর্শকদেরও। এর মধ্যেই শেষ ওভারের পঞ্চম বলে একটা চোখ ধাঁধানো রিভার্স স্কুপে থার্ডম্যান দিয়ে বল সীমানাছাড়া করলেন জহুরুল। এক বল বাকি থাকতে ঢাকা জিতে গেলো দারুণ উত্তেজনাময় এক ম্যাচ।

যে শটে দলকে জয় এনে দিলেন জহুরুল, এই শটটা কোনো ম্যাচে আগে কখনোই খেলেননি তিনি! ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে কথাটা জানা গেলো জহুরুলের মুখ থেকেই। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বলেন, ‘শটটা অনুশীলনে অনেক সময় চেষ্টা করেছি। কিন্তু ম্যাচে কখনো খেলিনি। এই প্রথম এটি ম্যাচে খেললাম। ব্যাপারটা জুয়ার মতো ছিলো।’

ম্যাচ পরিস্থিতিই আসলে জুয়াটা খেলতে বাধ্য করেছিলো জহুরুলকে। ওই ওভারে জেতার জন্য ঢাকার দরকার ছিলো ছয় রান। প্রথম দুই বলে ব্রাফেটের লো ফুলটসে একটাও রান নিতে পারেননি জহুরুল। তৃতীয় বল থেকে আসে এক রান। লেগ বাইয়ে আসা ওই রানের পর স্ট্রাইকে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। চতুর্থ বলে তিনি নেন এক রান। পরে স্ট্রাইক ফিরে পান জহুরুল।

তখন ঢাকার প্রয়োজন দাঁড়ায় দুই বলে চার রান। ম্যাচটাকে এই রকম বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে আসার পিছনে দায় ছিলো জহুরুলের। আবার ম্যাচটা যে ঢাকা জেতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো, তাতেও ছিলো তার অবদান। কিন্তু দর্শকরা কোন জহুরুলকে শেষ পর্যন্ত মনে রাখবে— তা ঠিক করে দেয়ার ভার পড়লো জহুরুলের কাঁধেই।

ম্যাচ শেষে জহুরুল বলেন, ‘প্রথম দুটি বল আমি স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্রাফেট সাধারণত একটু দ্রুতগতির এবং তার ইয়র্কারগুলো প্রায় নিখুঁত। চার মারার চিন্তাটা তাই ভুল ছিলো। যদি এক রানের চিন্তা করতাম, তাহলে ব্যাটে লাগত। ম্যাচটায় আমি দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলাম। পরে চিন্তা করেছি, যেহেতু দুটি বলে ইয়র্কার করে সফল হয়েছে, আবারও ইয়র্কার করবে। আমি তাই জুয়ার মত চিন্তা করলাম।’

এই চিন্তাটাই জহুরুলকে এমন একটা শট খেলতে উদ্বুদ্ধ করলো, যা তিনি আগে কোনো ম্যাচে খেলেননই নি এবং বিস্ময়করভাবে জহুরুল সফল হয়ে গেলেন। যা আবার আলোচনায় নিয়ে এলো তরুণ সমর্থকদের কাছে প্রায় অচেনা জহুরুলকে। শটটা জহুরুলের জন্যও ছিলো দারুণ তৃপ্তির— যা প্রমাণ হয় ম্যাচ শেষে তার সেজদায় অবনত হওয়ার মাধ্যমে।