মুস্তাফিজই কি ক্রিকেটের নতুন সুপার স্টার?

প্রশ্নটা হয়তো বড্ড আগেই করা হয়ে গেলো। কিন্তু এটা কি একেবারেই বাজে প্রশ্ন? সাম্প্রতিক ক্রিকেট পরিসংখ্যান এবং দর্শকদের উপর খেলোয়াড়দের প্রভাবের বিষয়গুলো সামনে আনলে কিন্তু তা মনে হবে না। মুস্তাফিজ বিশ্ব ক্রিকেটের সুপার স্টার কিনা- তা নিশ্চিত হতে আরো দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রয়োজন। তারপরও প্রশ্নটা করে ফেলা যাচ্ছে দু্টি কারণে।

একটি কারণ হলো টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে এবং টেস্ট অভিষেকেও চমকে দিয়েছেন এই বাঁহাতি তরুণ। পাকিস্তানকে বাংলাদেশ প্রথম যে টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচটিতে হারালো, তাতে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন সাতক্ষীরার এই পেসার। পরে ওয়ানডে অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে যা করেছেন, তা দেখেছে পুরো বিশ্ব।

এখানে আপনি প্রশ্ন করে বসতে পারেন- খেললো ভারতের বিপক্ষে, পুরো বিশ্ব দেখলো কী করে? পুরো বিশ্বের দরকারই বা কী? উত্তর হলো- ভারত খেললে সেখানে পুরো বিশ্বের দৃষ্টি থাকবেই। এখানে বিশ্ব বলতে যে ক্রিকেটখেলুড়ে দেশগুলোর সম্মিলনকে বোঝানো হচ্ছে, এটাও নিশ্চয় বলে দেয়ার দরকার নেই। এরপর টেস্ট অভিষেকে তার কারণেই মাত্র ২৪৮ রানে গুটিয়ে গেছে প্রোটিয়ারা।

ক্রিকেটখেলুড়ে দেশগুলো ভারতকে অনুসরণ করে ক্রিকেটে তাদের প্রবল প্রতাপের কারণে। এ ছাড়া ক্রিকেটে তাদের সামর্থ্যকেও আপনার মাথায় রাখতে হবে। ভারত যে দল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে এসেছিলো, একই দল নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের মিশনেও নেমেছিলো তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া স্কোয়াডটিই ভারতের বর্তমান সেরা দল। সেই সেরা দলের সেরা ব্যাটিং লাইনের বিপক্ষে জীবনের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট! মুস্তাফিজের কীর্তিকে শুধুমাত্র ‘মিরাকল’ বলে উড়িয়ে দেয়ার পথটা তাই বন্ধ। মুস্তাফিজ যা করেছেন, তা তিনি নিয়মিতই করবেন। এর মানে এটা নয় যে, প্রতি ম্যাচেই পাঁচটি- ছয়টি করে উইকেট নিয়ে দিবেন তিনি; এর মানে হলো প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের হাড়ে কাঁপুনি তুলে যাবেন মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজ ক্রিকেটের নতুন সুপার স্টার কিনা; এই প্র্রশ্ন উঠে যাওয়ার দুটি কারণের কথা বলেছিলাম। প্রথম কারণটা বললাম ভারতের বিপক্ষে সাফল্য। প্রথম কারণটা আরো একটু বিস্তৃত হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দিকে তাকালে। তারা তো ভারতের চেয়েও শক্তিশালী। তাদের বিপক্ষেও তো সফল মুস্তাফিজ। প্রথম কারণটা যৌক্তিক কিনা তা বিবেচনা করা এখন আপনার দায়িত্ব। বিবেচনা করতে কষ্ট হলে আরো একটু পরিস্কার করি- মুস্তাফিজ যে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুটি দলের বিপক্ষে ম্যাচের পর ম্যাচ ভালো খেলে গেলেন, এটাই সে সুপারস্টার কিনা; সে প্রশ্ন উঠার এক নম্বর কারণ।

দ্বিতীয় কারণটি দেখুন- গত কয়েক বছরে কোনো বোলার মুস্তাফিজের মতো এতোটা দ্রুত আলোচনার তুঙ্গে উঠতে পারেননি। বোলার না বলে যদি ক্রিকেটার বলেন, তাহলে হয়তো অনেকের নাম আসবে। যেখানে সর্বাগ্রে থাকবে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথের কথা। লেগ স্পিনার হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে দ্বিতীয় শুরুটা করেছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। এতেই বাজিমাত। পৃথিবীর সেরা ব্যাটসম্যান এখন তিনিই। মুস্তাফিজকে যদি ক্রিকেটের নতুন সুপারস্টার মনে করা হয়, তবে তার আগের সর্বশেষ সুপারস্টার এই স্মিথ।

তালিকা করলে নাম আসবে আরো অনেকের। কিন্তু স্মিথ ও মুস্তাফিজের প্রভাব এতোটাই প্রবল যে, অন্যেরা হয়তো স্বেচ্ছায়-ই নিজেদের নাম সরিয়ে নিতে চাইবেন!

প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা থাকলে কাউকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। মুস্তাফিজের মধ্যে সেটা আছে। তাকে ঠেকানো তাই ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠার কথা। ব্যাটসম্যানদের জন্য এবং বাংলাদেশের সব প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ের খবর হলো, মুস্তাফিজ কিন্তু প্রকৃতির দেয়া ক্ষমতাটা দেখেশুনে ব্যাবহার করাও শিখে ফেলছেন!

জীবনের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে প্রবল ক্ষমতাবান প্রতিপক্ষের প্রতিনিধি যখন বলে দেন যে, মুস্তাফিজ বিশ্বমানের বোলার, তখন কিন্তু সে সুপারস্টার হতে যাচ্ছে কিনা; সে প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই হবে। না হলে লোকে আপনার ক্রিকেট বোঝার ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে ছাড়বে!

আপনি আরো পড়তে পারেন

মুস্তাফিজ যদি আর একটি উইকেট পেতেন...

প্রথম দিনেই ব্যাকফুটে প্রোটিয়ারা

টেস্টেও বদলে যাওয়ার তাড়না