ভোটযুদ্ধের আগে নেতারা কেন শাহজালালের মাজার জিয়ারত করেন?

প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের পর নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একাধিকবার হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেছেন।

এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও এই মাজার জিয়ারতের পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে আসছেন। এ ধারা থেকে বাদ যাননি সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও।

রাজনীতিতে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার যে সংসদীয় আসনে অবস্থিত, সেই সিলেট-১ আসনে যে দল জয়ী হয়, তারাই সরকার গঠন করে।

এছাড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের দল-মত নির্বিশেষে প্রায় সব মানুষের কাছে ইসলাম ধর্মের এই প্রচারককে শ্রদ্ধার সাথে দেখে থাকেন। ফলে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত এখন রাজনীতির একটি ‘রীতিতে’ পরিণত হয়েছে।

বছরান্তেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটের রাজনীতিও বেশ জমে উঠেছে। যদিও প্রধার দুই রাজনৈতিক শিবিরে নির্বাচনকালীন সরকারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট সফরে গিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) ও হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সফরে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গেলোবারের পর এবারও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি পূণ্যভূমি সিলেট থেকে। আপনারা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক নৌকায় ভোট দিন। সরকার গঠনের সুযোগ দিন।

এর দু’দিন পর ১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে গিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দেন সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এরপর আজ ৫ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে সিলেট সফরে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তার এই সফরকে দলের পক্ষ থেকে ‘ব্যক্তিগত’ বলা হলেও রোববার শহরে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিশাল মোটর শোভাযাত্রা সফরটির যে রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে তারই জানান দিচ্ছে।

তবে খালেদা জিয়ার এবারের হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের সাথে এবার নতুন যুক্ত হয়েছে দুর্নীতির মামলার রায়। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মাজার জিয়ারতের বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারের খাদেম সৈয়দ সাব্বির আহমদের বলেন, সিলেটকে বাংলাদেশের পূণ্যভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে অবস্থিত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারতের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে সকল রাজনৈতিক দলের। এর ফলে সিলেট-১ আসনের রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে।