স্পিন উইকেট: সফলতার মন্ত্র না হারের ফাঁদ

প্রথাগতভাবে স্পিন বোলিংই বাংলাদেশের প্রধানতম শক্তি। গত কয়েক বছরে ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছেন পেসাররাও। তারপরও দেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামলে স্পিনাররাই ঘুরেফিরে হয়ে উঠেন প্রধান ভরসার জায়গা। ঢাকা টেস্ট পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এ কথাই বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

কিন্তু স্পিনারদেরই মূল চালিকাশক্তি ধরে বৃহস্পতিবার শুরু হতে চলা ঢাকা টেস্টে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ। সন্দেহাতীতভাবেই সাকিব আল হাসানবিহীন বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের চেয়ে বলবান শ্রীলঙ্কার স্পিনশক্তি। হোম কন্ডিশন হলেও রাজ্জাক-তাইজুল-মিরাজদের চেয়েও অভিজ্ঞতা-দক্ষতা ও বৈচিত্রে এগিয়ে লঙ্কানদের স্পিন আক্রমণ। যার নেতৃত্বে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। অফস্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা ও চায়নাম্যান লক্ষ্মন সান্দাকান দুর্বিসহ করে তুলতে পারেন উইকেটে তামিম-মুমিনুলদের সময়।

তাই প্রসঙ্গতই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বড় পরীক্ষা দিতে হবে লঙ্কান স্পিনত্রয়ীর বিরুদ্ধে। মিরপুরে বাংলাদেশের সর্বশেষ দুই জয়ে স্পিন ছিলো সবচেয়ে বড় অস্ত্র। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে প্রতিপক্ষ উপমহাদেশের দল শ্রীলঙ্কা বলেই স্পিন কৌশল বুমেরাং হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। সুতরাং প্রশ্ন উঠছে— রঙ্গনা হেরাথ-দিলরুয়ান পেরেরাদের বিপক্ষে স্পিনিং উইকেট কি সফলতার মন্ত্র হয়ে উঠবে নাকি হবে হারের ফাঁদ?

উপমহাদেশের দলগুলোর স্পিনের বিপক্ষে ভালো পারফর্মের যে ইতিহাস, তাতে বাংলাদেশের অবস্থানও খুব একটা খারাপ নয়। তারপরও পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা তিন টেস্টে দুই দলের মধ্যে সেরা বোলার রঙ্গনা হেরাথ। ছয় ইনিংসে তার শিকার ২১ উইকেট। মানে একজন স্পিনারের সামনেই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশিবার উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট যে নিয়েছেন, তিনি মেহেদি হাসান মিরাজ। গত তিন বছরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা তিন টেস্টে তার শিকার ১৩ উইকেট।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া টেস্টের ফল যে এই দুই স্পিনারের পারফর্মের উপর অনেকখানি নির্ভর করছে, এ কথা বলাই যায় এবং এখানেই তৈরি হয় বাংলাদেশের পা হড়কানোর শঙ্কা। হেরাথের তুলনায় মিরাজের অভিজ্ঞতা যে একেবারেই অকিঞ্চিৎকর।

চট্টগ্রাম টেস্টের আগে ধারণা করা হচ্ছিলো, জহুর আহমেদের উইকেট হয়ে উঠবে স্পিনারদের উল্লাসের মঞ্চ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। প্রথম দুই একদিনে তো নয়ই, টেস্টের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম দিনেও স্পিনাররা একেকটা উইকেটের জন্য রীতিমত শ্রমিকের মতো খেটে গেছেন। উইকেটের বন্ধুতার হাত প্রসারিত ছিলো কেবল ব্যাটসম্যানদের দিকে।

ঢাকা টেস্টের আগেও স্পিনিং উইকেট চাই বলে রব উঠেছে এবং এবার বলা হচ্ছে, সত্যিই ঢাকার উইকেট হয়ে উঠবে স্পিনারদের বিজয়োৎসবের প্রাঙ্গন। ঢাকা টেস্ট শুরুর আগে, বুধবার বাংলাদেশ অধিনায়ক তার উইকেট দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘উইকেট দেখেছি। শুষ্ক মনে হয়েছে। আমার মনে হয় এই উইকেটে স্পিনাররা সহায়তা পাবে। এই টেস্টে আমরা একটা ফলাফল আশা করতে পারি।’

ফলাফল মানে তো শ্রীলঙ্কার জয়ও হতে পারে। বাংলাদেশ অবশ্য সেটা নয়, আশা করছে বিপরীত ফল আর সেটা পাওয়ার পথেই প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারেন রঙ্গনা হেরাথ ও দিলরুয়ান পেরেরা। এদের বিষয়ে ঠিক কী ভাবছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক?

মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘হেরাথ অভিজ্ঞ বোলার। দিলরুয়ানও ভালো মানের। তাদের প্রতি তাই আমাদের সম্মান রাখতে হবে। তারা যে মানের বোলার, তারা ব্যাটিং উইকেটেও ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তি দিতে পারে। কিন্তু আমাদের ব্যাটিং লাইন আরো ভালো হচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

মাহমুদুল্লাহদের আত্মবিশ্বাসের পারদ যতো উঁচুতেই থাক না কেনো, তা নিচে নেমে যেতে পারে ইতিহাসের পাতা উল্টালে। গত তিন বছরে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে উইকেট শিকারি বোলার একজন স্পিনার। গত আগস্টে মিরপুরে এক ম্যাচেই নয় উইকেট নেন নাথান লায়ন। দুই বছর আগে ইয়াসির শাহ নিয়েছিলেন সাত উইকেট। হেরাথের সঙ্গে অভিজ্ঞতার তুলনা করলে এ দুজন নিশ্চয় পিছিয়েই থাকবেন।

নিজেদের শক্তির উপর ভরসা করে বাংলাদেশ দল যে স্পিনিং উইকেট চাচ্ছে, তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এই নির্দোষ চাওয়ার মধ্যে যে হারের ফাঁদও লুকিয়ে আছে, বাংলাদেশের সেটা ভুলে গেলে কি চলবে?