খালেদার ৫, তারেকসহ পাঁচজনের ১০

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ আদালত। এছাড়া লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচজনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

দেশব্যাপী প্রবল রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নাগরিকদের উৎকণ্ঠার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান এ রায় দেন।

গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। এদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্ধিকী ও মমিনুর রহমান বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আর কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে কড়া নিরাপত্তায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে আদালতে পৌঁছান বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। তারপর আদালতে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

এর আগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে কারাগারে থেকে আদালতে হাজির করা হয় ব্যবসায়ী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদকে। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানসহ বাকি দুইজন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

এদিকে আজ আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করের আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা। নিবন্ধিত আইনজীবীদের ছাড়া অন্যদের আদালতে প্রবেশ পরতে দেয়া হয়নি। আর গণমাধ্যম প্রতি একজন করে সাংবাদকর্মী প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেত্রীর মামলার রায়কে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার বাসভবন এবং আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছ, এরই মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে ৪৩ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে ২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য টহল দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ১০ বছর এ মামলার কার্যক্রম চলার পর আজ রায় ঘোষণা হলো।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদ। এজাহারে টাকা আত্মসাতের (ঘটনার) ১৯৯৩ হতে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চের মধ্যে ১৩ নভেম্বর দেখানো হয়েছে। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ অন্য ছয় আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। মামলার ২৬১ কার্যদিবসের মধ্যে ৪৩ দিন আদালতে হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে আট দিন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর থেকে রায় পর্যন্ত চার বছরে খালেদা জিয়ার অনাস্থার কারেণ চারজন বিচারক বদল করা হয়েছে। সর্বশেষ বিচারকের ওপর অনাস্থা দিলে তা নামঞ্জুর হয়ে যায়।

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দেয়া দীর্ঘ বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। আদালতে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে। এর কোন আইনি ভিত্তি নেই। মামলার অভিযোগের সাথে তার কোন ধরণের সংশ্লিষ্টা নেই।

খালেদা জিয়ার দাবি, তাকে রাজনীতি, নির্বাচন ও জনগণ থেকে দূরে রাখতে এ মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রায়ের আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনেও একই ধরণের বক্তব্য রেখেছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের খালেদা জিয়া কোন দুর্নীতি করেনি। ন্যায় বিচার হলে আমি বেকসুর খালাস পাবো। মামলায় যে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আত্মসাৎ হয়নি। ওই টাকা এখনো ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে এবং তা বেড়েছে কয়েক গুণ হয়েছে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, আদালতে তারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন।

বিদেশ থেকে পাঠানো এতিমদের সহায়তার ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এই মামলায় ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো ৩৫টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে চারটি দুর্নীতি সংক্রান্ত।