ভাগ্য নাকি সব সময় সাহসীদের পক্ষে থাকে। সফলতা নাকি তাদের পায়েই নুইয়ে দেয় মাথা, যারা হাল ছেড়ে দেয় না কখনো। এই সব আপ্তবাক্য নিঃসন্দেহে অনেক আশাহীনের আশা জাগায়। অনেক দিশাহীনকে দেখায় দিশা। তারপরও যারা হতাশার তিমিরে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন, অন্ধকারের গভীর সুড়ঙ্গে পথ হারানোর ভয়ে থাকা তাদের জন্য নতুন আশার আলো হয়ে উঠতে পারেন আব্দুর রাজ্জাক। সুদীর্ঘ চার বছরের প্রতীক্ষা শেষে যার পা পড়েছে জাতীয় দলের মঞ্চে এবং এসেই যিনি প্রমাণ করেছেন, তার ফেরাটা কেবলই ফেরা নয়, তা বরং হাল না ছাড়ার এক দৃপ্ত ঘোষণা।

razzak talking to media after taking four wicket against sri lanka on his comeback

গত চার বছরে পৃথিবী চারবার ঘুরে এসেছে সূর্যের চার দিকে। শীত-বসন্ত চারবার এসে ছাপ ফেলে গেছে প্রকৃতিতে। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাকের আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি। ফেরার উপলক্ষ্য যে তিনি তৈরি করেননি, তা কিন্তু নয়। গত চার বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাঁহাতি এই স্পিনার শিকার করেছেন ২০০-এর বেশি উইকেট। স্পর্শ করেছেন প্রথম শ্রেণির ৫০০ উইকেট নেয়ার গৌরবের চূড়া। কিন্তু জাতীয় দলের দরজাটা তার কাছে হয়ে ছিলো কেবলই দুর্গম্য সীমারেখা।

এই পরিস্থিতিতে ঝড়ে যায় কতো প্রতিভা। কর্পুরের মতো উধাও হয়ে যায় কতো দাপুটে পারফরমারের কতো গল্প। কিন্তু রাজ্জাক তা হতে দেননি। পরিস্থিতি যতো কঠিন হয়েছে, ততো কঠিন করে চোয়াল শক্ত করেছেন তিনি। পরিস্থিতি যতো তাকে ঠেলে দিয়েছে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে, রাজ্জাক ততো শক্ত করে ধরেছেন আলোর মশাল। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, মেলে ধরেছেন নিজের সর্বশক্তি। ঘূর্ণিজালে আটকে ফেলেছেন ব্যাটসম্যানদের। জাতীয় দলের সুযোগটা না এলেও, আলোচনা থেকে কখনো নিজেকে হারাতে দেননি রাজ্জাক। পারফরম্যান্সের শক্তিতে নিজেকে করে গেছেন শাণিত।

razzak takes four wickets in test come back 1

অবশেষে দীর্ঘ দিবস ও রজনী পেরিয়ে আবার জাতীয় দলের একাদশে রাজ্জাক। কখনো বিশ্বাসের চকচকে ভিতে মরচে না পড়তে দেয়া তিনি সুযোগ পেলেন সাকিব আল হাসানের অনাহুত ইনজুরি-আঘাতে। সুযোগ পাওয়ার ধরনটা প্রত্যাশিত না হলেও রাজ্জাক মেনে নেন তার ভাগ্যের প্রসন্নতা। আঁকতে শুরু করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবার প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের খাবি খাওয়ানোর স্বপ্ন। কিন্তু স্কোয়াডে থাকার পরও চট্টগ্রামে কেবল দর্শক হয়ে থকেন তিনি। তবে ঢাকায়, যখন সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে, তখন আর তাকে অবজ্ঞা করেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। রাজ্জাকও রেখেছেন তাদের মান।

চার বছরের অনভ্যস্ততা পাশ কাটিয়ে রাজ্জাক কেমন করবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিলো। সংশয়ের আরো কারণ ছিলো ঘরোয়া পর্যায়ের মানহীন উইকেট। প্রায়ই বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফরমাররা জাতীয় দলে এসেই হয়ে যান চুনোপুটি। কিন্তু রাজ্জাক ওই সংশয় এবং এই কথাকে প্রমাণ করলেন মিথ্যে।

প্রথম স্পেলের পাঁচ ওভারে দারুণ ভোগালেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। তুলে নিলেন এক উইকেট। পরের স্পেলের প্রথম ওভারে রাজ্জাকের স্পিন যেনো দুর্বোধ্য মায়াজাল হয়ে হাজির হলো লঙ্কানদের সামনে। এবার প্রথম ওভারেই তুলে নিলেন দুই উইকেট। লাঞ্চের আগেই রাজ্জাকের নামের পাশে বসে গেলো তিন শিকারের গৌরব। পরে যোগ হলো আরো একটি। চার বছর, চার চারটা বছর একটুও যে শক্তি হারাননি, বরং অর্জন করছেন আরো ধার, ফেরার পর প্রথম সুযোগই তা বুঝিয়ে দিলেন রাজ্জাক।

ম্যাচ শেষে যখন তাকে বলা হলো, একটুও কি কলজে কাঁপেনি? জাতীয় দলে সব তরুণদের ছড়াছড়ি। তাদের আধুনিক জীবনধারা। তাদের ক্রিকেট-দর্শন অনেক পরিণত। সব কিছু অন্য রকম। এ সব একটুও প্রভাব ফেলেনি? রাজ্জাকের কণ্ঠে দৃঢ়তা। বললেন, ‘একটু তো চাপ ছিলোই। কিন্তু পরে তা কাটিয়ে উঠেছি। জাতীয় দলে সবাই সিরিয়াস। সবাই নিজের দায়িত্বটা পালন করতে মনোযোগী থাকে। সব মিলিয়ে খুব বেশি পার্থক্য দেখিনি। আমি কেবল নিজের কাজটা ভালোভাবে করতে চেয়েছি।’

নিজের কাজটা প্রথম সুযোগে ভালোভাবেই করেছেন রাজ্জাক। লঙ্কানদের টপঅর্ডার ছেঁটে তিনিই তৈরি করেছেন এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। তার এমন পারফরম্যান্স কি চার বছরের অবজ্ঞার জবাব? ম্যাচের পর ম্যাচে উইকেটের মালা গেঁথেও উপেক্ষিত হওয়ার বিরুদ্ধে কণ্ঠছেড়া স্লোগান? এমন প্রশ্নে রাজ্জাক বিজয়ী বীরের মতো শৌর্যবান কিন্তু আশ্চর্যরকম বিনম্র, ‘পারফরম্যান্সকে জবাব হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। আমি সে রকমভাবে দেখছিও না। আমি বরং যেখানে সুযোগ পেয়েছি, ভালো করার চেষ্টা করেছি।’

শেষ পর্যন্ত এই চেষ্টাই হয়তো সফলতার গোপনসূত্র হয়ে থাকে। হয়ে থাকে হাল না ছাড়ার শক্তির আধার। রাজ্জাক মনে করেন, তার এই ফিরে আসা হাল ছাড়তে না চাওয়া বহু মানুষের কাছে সাহসের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং এই দৃষ্টান্ত শুধু একজন ক্রিকেটযোদ্ধার জন্য নয়, বরং জীবনযুদ্ধে না হারতে চাওয়া মানুষের কাছেও এই ফেরা হয়ে থাকবে সাহসের বাতিঘর।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.