স্বজনদের প্রশ্ন: তদন্তে গাফলতি না ধামাচাপার চেষ্টা?

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত হত্যারহস্য উদঘাটন হয়নি। সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করা সেই আলোচিত খুন নিয়ে সাংবাদিক দম্পতির স্বজনরা তাই প্রশ্ন তুলছেন, এই দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য কী আসলে তদন্তে গাফলতি দায়ী, নাকি খুনের ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা?

২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি নৃশংসভাবে খুন হন ঢাকায় নিজেদের বাসায়। এ হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরে প্রথমে তদন্ত করে পুলিশ। তারপর হস্তান্তর করা হয় র‍্যাবের কাছে। এরপর তদন্তভার দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি।

নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বিবিসিকে বলেন, ছয় বছরেও তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই। তদন্তের বিষয়ে এবছর কিছুই জানানো হয়নি তাদের।

তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যাপারেই তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সাফল্য দেখা গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরে তেমন কোন কিছু দেখা যায়নি। ন্যূনতম অগ্রগতি পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি।

রুনির পরিবার মনে করেন, এই তদন্তে সংস্থাগুলোর গাফলতি থাকতে পারে অথবা তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই হত্যারহস্য উদঘাটন করতে চান না। হতে পারে আলোচিত এই খুনের ঘটনাটিকে ধামাচাপার দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালত জমা দিতে বলা হলেও র‍্যাবের পক্ষ থেকে ৫৪ বার সময়ের আবেদন করা হয়েছে।

এই দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে দুটো বিষয় থাকতে পারে বলে মনে করেন নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান। তিনি বলেন, সাধারণভাবে এখানে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে অত্যন্ত অদক্ষ মনে হয়েছে। আরেকটি হতে পারে সরকার চায় না অথবা এর সঙ্গে জড়িত বড় কেউ থাকার কারণে তদন্তকারীরা কোন প্রকার অগ্রগতি হয়নি।

নওশের বলেন, আমরা তো যতদিন বেঁচে আছি এই হত্যার বিচার চাইবো। কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার পাবো বলে জানি না।

এদিকে সাংবাদিক দম্পতির খুনের এতদিনেও অগ্রগতি না থাকায় ছয় বছর পূর্তিতে বিচারের দাবীতে আজ রোববার ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে সাংবাদিকরা । এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই বিচারের দাবিতে তারা টানা আন্দোলনে নামলেও কিছুদিনের মধ্যে তা থেমে যায়। সে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা।

এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হচ্ছে- নিহত দম্পতির ৫ বছরের শিশু মেঘ। তার বয়স বর্তমানে ১১ বছর। তার মামা নওশের রোমান বলেন, অন্য বাচ্চাদের মতোই মেঘ বেড়ে উঠছে। কিন্তু সে তার বাবা-মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ বাবা-মায়ের কথা সবসময়ই মনে পড়ে তার।