যে সব কারণে পিএসজি ছাড়তে মরিয়া নেইমার

দল-বদলের সব রেকর্ড ভেঙে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে এসেছিলেন নেইমার। নতুন ঠিকানায় ঠিকঠাক থিতু হওয়ার আগেই বিতর্ক এবং ঝামেলা দুটোতেই জড়িয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন। তার প্যারিস ছাড়ার গুঞ্জনের সূত্রপাত সেখান থেকেই।

গুজব বলে সব খবর উড়িয়ে দেওয়াটাও অমূলক। নেইমারের পিএসজি ছাড়ার পেছনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুরকমই কারণ আছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে নেইমারের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া নিয়ে। এমনকি পিএসজি প্রেসিডেন্ট নাসির আল খেলাইফি ব্রাজিলে গিয়ে আশার বাণী শোনালেও তার কথায় চিড়ে ভিজছে না।

ইনজুরি নেইমারকে অন্তত দু মাসের নির্বাসন দিলেও খবরের শিরোনামে ভালোভাবেই আছেন তিনি। প্রতিবেদনগুলো তার দলবদল নিয়ে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, নতুন মৌসুমে নেইমারের ঠিকানা পরিবর্তিত হলে সেটা বিস্ময়কর কিছু হবে না। কেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার পিএসজি ছাড়তে পারেন সেটার সম্ভাব্য কিছু নেপথ্য কারণ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

সুরক্ষার অভাব: ফ্রেঞ্চ ফুটবলে শারীরী ফুটবলের প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। নেইমার নিজেও এখানকার ঘরোয়া ফুটবলে সুরক্ষার অভাববোধ নিয়ে অভিযোগ করেছেন। প্রায় শেষ হয়ে আসা মৌসুমে কয়েকবার এর শিকারও হয়েছেন তিনি। মারাত্মক ট্যাকলের মুখোমুখি হয়েছিলেন নেইমার। যা তার ফিটনসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। প্রথম কয়েকবার রক্ষা পেলেও তিন সপ্তাহ আগে অলিম্পিক মার্শেই ম্যাচে দীর্ঘমেয়াদে ইনজুরিতে পড়েন নেইমার। এ কারণে তাকে পায়ের অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে।

ফ্রেঞ্চ ফুটবলের গুণগত মান: ইউরোপিয়ান শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান আছে সবার পেছনে। উল্লেখযোগ্য দু একটি দল ছাড়া ফ্রেঞ্চ ফুটবলে নেই কোনো পরাশক্তি। লিগের অধিকাংশ দলগুলোই খর্বশক্তির। দলগুলোতে আবার বিশ্বমানের ফুটবলারও নেই। তাই একচ্ছত্র আধিপত্যে সাম্প্রতিক বছর ধরে রাজত্ব কায়েম করছে পিএসজি। নেইমার বুঝতে পারছেন এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশ্বসেরা হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের জন্য সম্ভাব্য সেরা হতে পারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কিংবা স্প্যানিশ লা লিগা। যাতে করে বিশ্বসেরা ক্লাব ও ফুটবলাররা তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে।

ভ্রমণক্লান্তি: ফ্রেঞ্চ ফুটবলের অধিকাংশ ক্লাবই রাজধানী প্যারিসের আশেপাশে। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসে ভ্রমণ করতে হয় পিএসজি ফুটবলারদের। যেটা নেইমারের কাছে বিরক্তিকর। বাস ভ্রমণের ক্লান্তির কথাও ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার স্বীকার করেছেন। কারণ ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজ ভ্রমণটা তার কাছে আরামদায়ক এবং স্বস্তির।

মানসম্মত মাঠ সংকট: ফ্রেঞ্চ ফুটবলের মাঠ নিয়ে নেইমারের একটা অভিযোগ আছে। এখানকার মাঠ স্প্যানিশ ফুটবলের মতো অতটা মসৃণ নয়। যা তার ড্রিবলিংয়ে সমস্যা তৈরি করে। মাঠে খানাখন্দ, ঘাসের অমসৃণতা এবং পরিচর্যার অভাববোধটা ভালোভাবেই তিনি তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। এতে করে ইনজুরির প্রবণতা বাড়ে বলে দাবি করেন নেইমার।

রেফারিং বৈষম্য: নেইমারের পিএসজি ছাড়ার আরেকটা নেপথ্য কারণ হতে পারে বাজে রেফারিং। লিগ ওয়ানে এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে নেইমারের যে, নিজে ফাউলের শিকার হয়ে আবেদন করে উল্টো হলুদ কার্ড দেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ফ্রেঞ্চ ফুটবলে কাউকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে খেললেও রেফারির সেদিকে নজর কমই থাকে। যেটা নিয়ে কম-বেশি অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাননি নেইমার।