শ্রীহীন বনশ্রী, ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ জীবন

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত বনশ্রী। মাসের পর মাস পেরিয়ে বছরও শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও বনশ্রীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি থেকেই যাচ্ছে অবহেলিত। শুধু শীতকাল বা বর্ষাকালের নির্দিষ্ট সময়ের কোন ভোগান্তি নয় বনশ্রী সড়কের ভোগান্তির কথা সারা বছরই সমালোচিত। শ্রীহীন বনশ্রীর এমন করুণ দশায় ধুলাবালিতে অতিষ্ট এখানকার সাধারণ মানুষ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ডিএনসিসি’র ২২নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকা বনশ্রী। রামপুরা টেলিভিশন ভবন থেকে বনশ্রীর মেরাদিয়া হাট পর্যন্ত রাস্তাটি বর্ষায় থাকে জলাবদ্ধ আর শীতের সময় পরিণত হয় ধুলার রাজ্যে। এখানকার মানুষের জন্য স্থায়ী ভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে সড়কটি। সড়কের এই বেহাল দশায় নষ্ট হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়। ভাঙাচোরা এই সড়ক দিয়েই চলাচল করছে বাস, ভারি ট্রাক, লরিসহ অসংখ্য যানবাহন।

সরেজমিন বনশ্রী সড়কের করুণ অবস্থার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাসের পর মাস যত্নহীন থাকা সড়কটিতে বর্তমানে সংস্কারের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। অসংখ্যবার সড়ক সংস্কারের দাবীর মুখে ডিএনসিসির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাব এর সহযোগিতায় গত বছর ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। স্থানীয় সূত্র বলছে, কাজ শুরুর প্রথম থেকেই গুরুত্বহীনভাবে ধীর গতিতে চলছে রাস্তার উন্নয়ন কাজ। চলমান এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ জুন ২০১৮ পর্যন্ত। তবে সাধারণ মানুষের শঙ্কা নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ হবে না।

বনশ্রীতে বসবাস করা কলেজ শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘ধুলার মধ্যে দিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত যেতে হচ্ছে। ধুলায় জামা-কাপড় নোংরা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাস্তার কাজ চলার কারণে এটি সংকুচিত হয়ে গেছে। এতেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়িঘোড়া। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।’ শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ নিত্যদিনকার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাব রাস্তার কাজ করার সময় একদমই পানি ছিটায় না। ফলে ধুলা বেশি হচ্ছে। ব্যস্ততম এই সড়কটি ব্যবহার করছেন বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী।

মোহাম্মদপুরগামী বনশ্রী সড়ক ব্যবহার করা স্বাধীন পরিবহনের চালক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন বনশ্রী পার হতেই সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি। রাস্তার কাজ শুরুর পর থেকে কখনো দুই ঘন্টাতেও শেষ হয় না এপথ। রাস্তার অবস্থা খারাপ থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। সামনে বৃষ্টিবাদলের দিন আসতেছে ভাঙ্গা সড়কে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হবে।’

বনশ্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বনশ্রীর মানুষের ভোগান্তি হয়তো থাকবে না। তবে রাস্তাটির কাজ বর্ষার আগে শেষ না হলে অনেক বেশি কষ্ট হবে আমাদের। তাই নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হবে এমনটাই আশা করছি।’

ডিএনসিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ মাত্র ১৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত কাজ করলেও নির্ধারিত সময়ে সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে প্রতিদিনই সিটি কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণে আসছেন। কাজটি শেষ হলে বনশ্রীর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আর থাকবে না।’