‘অবৈধভাবে’ ক্ষমতা দখলের দিনেই গণতন্ত্রের মহাসমাবেশ

২৪শে মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৮২ সালে ইতিহাসের এই দিনেই বর্তমান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে দেশের গণতন্ত্র হরণ করেন। আজ ২৪শে মার্চ একই দিনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের সমাবেশ করলো এরশাদের জাতীয় পার্টি।

সেদিনের সেই ২৪ মার্চে সামরিক শাসন জারি করে জাতীয় সংসদ ও প্রেসিডেন্টসহ মন্ত্রীপরিষদ বাতিল করেন এরশাদ। সেই সঙ্গে স্থগিত ঘোষণা করেন সংবিধানের কার্যকারিতা। শুরু হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ দেশের আপামর মানুষের ভাষায়, সেদিন থেকেই মূলত দেশে স্বৈরশাসন শুইরু হয়।

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে বন্দুকের মুখে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল এরশাদ। ৯ বছর পর গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটেছিল তার। ৩৬ বছর পর সেই এরশাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে, গলা উচিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলে। হায় গণতন্ত্র!’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে জিয়াউর রহমান। এরপর এক পর্যায়ে ক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। কিন্তু নব্বইয়ে তুমুল আন্দোলনে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি বুঝতে পারেন অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা রাজনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী। এরপর তিনি গণতন্ত্র চর্চায় ফিরে আসেন এবং এখনো রাজনীতি করে যাচ্ছেন।’

জাতীয় পা‌র্টির আজকের জনসভার কঠোর সমা‌লোচনা ক‌রেন বিএন‌পির মহাস‌চিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ব‌লেন, ‘২৪ মার্চ মূলত গণতন্ত্র‌ হত্যা দিবস। ইতিহাসের এই দিনে গণতা‌ন্ত্রিক সরকার‌কে স‌রি‌য়ে ক্ষমতা দখল ক‌রেছিল আজ‌কের এই এরশা‌দ। অথচ সেই ব্য‌ক্তিকেই আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যা‌নে জনসভা করার অনুম‌তি দেয়া হ‌য়ে‌ছে। অন্যদিকে আমরা বারবার জনসভার অনুম‌তি চাইলেও দেয়া হচ্ছে না।’

সামরিক শাসন জারির পক্ষে যুক্তি দিয়ে এরশাদ সেদিন (১৯৮২) বলেছিলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে জনগণ একটি সরকার নির্বাচিত করেছিলো, কিন্তু কিছুদিন পরেই তাদের তাদের আশা-আকাঙ্খা ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। আমি ক্ষমতা গ্রহণ না করলে দেশ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তো। আপনারা নিশ্চয়ই দেশের বিভিন্ন জায়গায় খাদ্যাভাবে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছিলেন।’

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুর সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘দেশের তৎকালিন পরিস্থিতি আমাকে সেদিন বাধ্য করেছে। আমার জায়গায় অন্য কেউ সেনাপ্রধান থাকলে তিনিও বাধ্য হতেন। জাস্টিস সাত্তার আমার কাছে এসে বললেন, তার মন্ত্রীরা নাকি দুর্নীতিবাজ। তাই তিনি ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে ছাড়তে চান। সেদিন এভাবেই বাধ্য হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেই।’

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র-ঐক্যের নেতা শফী আহমেদ জানান, ১৯৮৭ সালের ৯ নভেম্বর যুবলীগ নেতা নূর হোসেন এরশাদবিরোধী মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপর আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর আন্দোলনের সংগঠক ডা. শামসুল আলম খান মিলন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। মিলনের আত্মদানের মধ্য দিয়েেই স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। এরপর ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। পরের ইতিহাসটা আমরা সকলেই জানি।