সিটিকে উড়িয়ে দিল লিভারপুল

কার্যত শেষ হয়ে গেল ম্যানচেস্টার সিটির ট্রেবল জয়ের স্বপ্নটা। বুধবার অ্যানফিল্ডে পেপ গার্দিওলার দল যেভাবে বিধ্বস্ত হলো তাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকাটাই প্রায় অসম্ভব হয়ে গেল। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে এদিন সিটিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লিভারপুল।

আগামী মঙ্গলবার ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শেষ আটের ফিরতি লেগের ম্যাচ। ইউরোপিয়ান শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ঘরের মাঠে ওই ম্যাচে রূপকথার জন্ম দিতে হবে পেপ গার্দিওলার দলকে। জিততে হবে ৪-০ গোলে। কিন্তু গোল হজম করলেই বিপদ!

গত কয়েক বছর ধরে ইংলিশ ঘরোয়া ফুটবলে ছড়ি ঘোরাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি। এই মৌসুমে তো মাঝপথেই লিগ শিরোপাটা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে সিটিজেনরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের আবহটা যে একটু অন্যরকম সেটা অ্যানফিল্ড সফরে এসে বুঝলেন গার্দিওলার শিষ্যরা।

ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের মহারণ সিটির বিরুদ্ধে। ‘ইংলিশ ক্ল্যাসিকো’তে সিটিকে বিধ্বস্ত করে লিভারপুল বোঝাল অভিজ্ঞতার মূল্যটা। এমনি এমনি তো আর পাঁচবার ইউরোপ সেরা হয়নি তারা। ইউরোপের মঞ্চে অভিজ্ঞতার বিচারে তাদের কাছে যে সিটি একেবারেই নতুন দল সেটা বোঝা গেল এদিন।

ইংলিশ ফুটবলের দুই পরাশক্তির লড়াইটা শেষ হয়ে গেছে প্রথমার্ধের ৩১ মিনিটের মধ্যে। কুড়ি মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ম্যানচেস্টার সিটির রক্ষণদুর্গ। লিভারপুলের এই ঝড়ের মূল কাণ্ডারী মোহাম্মদ সালাহ। করলেন ম্যাচের প্রথম গোল, তৃতীয় গোলটি করালেন সাদিও মানেকে দিয়ে। সালাহর নিখুঁত ক্রসে মাথায় ছুঁয়ে টুর্নামেন্টের এই আসরে সপ্তম গোলটি করেন মানে।

দুই গোলের মাঝে ম্যাচের বিশ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন অ্যালেক্স অক্সলেড-চেম্বারলিন। ম্যাচের এক তৃতীয়াংশ সময়ের মধ্যে বেসামাল হয়ে ওঠা সিটি একদিক থেকে নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারে। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল হজম করতে হয়নি তাদের।

সেটার কারণটা হতে পারে সালাহর ইনজুরি। স্কোর লাইন ৩-০ হওয়ার পরপরই চোট নিয়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যান অল রেডদের মিশরীয় স্ট্রাইকার। প্রাণভোমরাবিহীন লিভারপুলের আক্রমণগুলো পরে অবশ্য আর দানা বেঁধে উঠতে পারেনি। ফিরমিনোরা চতুর্থবার গোল উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিতে পারেননি অ্যানফিল্ডের দর্শকদের।

তবু যা হয়েছে তাতেই খুশি মনে বাড়ি ফেরার কথা লিভারপুল ভক্তদের। তাদের জন্য আরেকটা দারুণ খবর হচ্ছে- সালাহর চোট আসলে গুরুতর কিছু নয়। তবে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে সালাহ করেছেন মৌসুমের ৩৮তম ও চ্যাম্পিয়নস লিগের চলমান আসরের সপ্তম গোল।

আসলে ব্যবধানটা তৈরি হয়ে গেছে ডাগ আউটে দুই কোচের মস্তিষ্কের লড়াইয়ে। যেখানে ১৩ বারের সাক্ষাতে সিটি কোচ গার্দিওলাকে সাতবারই হারালেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। জার্মান কোচ এদিন এমনভাবেই ছক কষেছেন যে এই মৌসুমে প্রথমবার কোনো ম্যাচে একবারও গোলমুখে শট নিতে পারল না সিটি!

অবশ্য প্রথম লেগে খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়ার পরও আশা ছাড়ছেন না সিটি কোচ গার্দিওলা। ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে অলৌকিক কিছুর আশায় আছেন স্প্যানিশ কোচ। বলেছেন, ‘কেউ হয়তো বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আমাদের সামনে আরো একটা ম্যাচ আছে।’