মর্মান্তিক: সন্তানকে বাঁচাতে পঙ্গুত্ব বরণের পথে মা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই বাসের চাপায় কলেজ ছাত্রের ডান হাত হারানোর রেশ কাটতে না কাটতেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এক নারী। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় আজিমপুর-আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী বিকাশ পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়েন গৃহিণী আয়েশা খাতুন। মূলত নিজের ৬ বছর বয়সী মেয়েকে বাঁচাতে গিয়েই বাসের নিচে পড়েন আয়েশা খাতুন। চিকিৎসকরা বলছেন, মেরুদণ্ড ভাঙ্গার কারণে আর কখনোই দাঁড়াতে পারবেন না তিনি।

গত বৃহস্পতিবার অন্যান্য দিনের মতো আয়েশা খাতুন মেয়ে আহনাদকে ধানমণ্ডির স্কলারস স্কুলে পৌঁছে দিতে বাসা থেকে বের হন। এরপর রাজধানীর নিউমার্কেটের নিকটস্থ চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে তাদের বহনকারী রিকশাটিকে একই দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা বিকাশ পরিবহনের দুটি বাস মাঝখানে ফেলে চাপ দেয়। এভাবে বাস দুটি রিকশাটিকে ঠেলতে ঠেলতে অনেক দূর নিয়ে যায়। চাপা খাওয়া অবস্থায় মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে পতিত হন আরো বেশি দুর্ঘটনায়।

বাসচাপায় গুরুতর আহত হন আয়েশা খাতুন। এরপর আয়েশাকে উদ্ধার করে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দুর্ঘটনায় ৬ বছর বয়সী মেয়ে আহনাদ তুলনামূলক কম আহত হয়। তবে সেই দুঃস্মৃতি এখনো ভুলতে পারছে না আহনাদ। ডাক্তাররা বলছেন, আয়েশার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। তার শতভাগ সুস্থ হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। তার পক্ষে কখনোই দাঁড়ানো বা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা সম্ভব নয়।

এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর ঘাতক বাস দুটি জব্দ এবং একটি বাসের চালক মোজাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আয়েশা খাতুনের স্বামী তানজীর আহমেদ তাহের নিউমার্কেট থানায় মামলা করেছেন। আয়েশা-তানজীর দম্পতির সাড়ে ৩ বছর বয়সী ছানিয়াত নামের আরো একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মতিউর রহমান বলেন, ‘বিকাশ পরিবহনের চালক মোজাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকটি বাসের চালক পলাতক আছেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা করছে পুলিশ।’

তানজীর আহমেদ বলেন, ‘ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আয়েশার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। তার দাঁড়ানোর সম্ভাবনা অনেক কম। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। স্ত্রীর কোমর থেকে নিচের অংশ পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনায় মোট চারটি জীবন এখন বিপন্ন।’

ল্যাবএইড হাসপাতালের নিউরো সার্জন চিকিৎসক মাসুদ আনোয়ার জানান, দুর্ঘটনায় আয়েশা খাতুনের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে গেছে। ইতোমধ্যে অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তবে কোমরের নিচের অংশ অবশ হয়ে আছে। এমন অসুস্থতায় পূর্ণ সুস্থ হওয়ার চান্স একদম কম। তবে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিলে হয়তো রিকভারি হতে পারে। তবে তার সুস্থ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত ও অবশ্যই সময় সাপেক্ষ।

রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক পথে পরিবহনগুলোর এক প্রকার নৈরাজ্য চলছে। প্রতিদিনই ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মোট ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৩৯৭ জন। আর আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। এতো দুর্ঘটনার পরও সড়ক পথে নৈরাজ্য থামছে না। আর এসব দুর্ঘটনায় দোষী চালক দৃষ্টান্তমূলক সাজা পেয়েছেন এমন ঘটনাও হাতেগোনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সঠিক বিচার না হওয়ায় বেপরোয়া হচ্ছেন চালকরা।