এশার বহিষ্কারাদেশ বাতিলে তৎপর ছাত্রলীগ

ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ইফফাত জাহান এশার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা জোর প্রচারণা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই এশার পক্ষে মাঠে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সরব হয়ে ওঠেছে ছাত্রলীগ।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের নির্যাতন করে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা। এ সময় তার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। ওই ঘটনায় এশাকে বহিষ্কারের দাবিতে সুফিয়া কামাল হলসহ গোটা ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারপন্থীরা বড় ধরণের বিক্ষোভ দেখায়।

ঘটনার সাথে সাথেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইফফাত জাহান এশাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে। এছাড়া ছাত্রীবিক্ষোভের মুখে পড়ে ওই রাতেই তাকে প্রথমে হল থেকে এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠলে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দেন। এর পরপরই ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার দাবিতে সোচ্চার হন।

এদিকে এশাকে বহিষ্কারের এক দিনের মাথায় কোটা সংস্কারের প্রশ্নে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে হ্যাশট্যাগ জুড়ে দিয়ে ‘#Stand_For_Isha' (এশার পক্ষে আমরা) তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এশাকে বহিষ্কার করার নিন্দা জানিয়ে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া দেশের অনেক স্থানেই এশার পক্ষে রাস্তায় মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ছাত্রলীগের সাবেক একজন সহযোদ্ধা হিসেবে অবিলম্বে কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইশরাত জাহান এশার শ্লীলতাহানির সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। সাথে তার বহিষ্কার প্রত্যাহার চাই।’

এছাড়া ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীগণ কর্তৃক এশাকে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে ফুলের মালা পরিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। এশাকে ফুলের মালা পরানো হচ্ছে এমন কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান লিখেছেন- ‘আমরা সাবেক ছাত্রলীগ, এশার পাশে’।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি সুফিয়া কামাল হলের এক আবাসিক ছাত্রী এ বিষয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগ এখন তাদের নেত্রীকে মহানায়িকা বানাতে ব্যস্ত। অথচ নির্যাতনের শিকার হওয়া ছাত্রীদের বিষয়ে তাদের কোন কথা নাই।’

এশার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘এশার বিষয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান নুপুর, নিশীতা ইকবাল নদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আবিদ আল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স -এই চারজন আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন।’

তদন্ত না করেই এশাকে কেন বহিষ্কার করা হল -এমন প্রশ্নের উত্তরে জাকির বলেন, ‘ওই সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা (আন্দোলনকারীরা) যা বলেছে আমরা তাই শুনেছি। কারণ তখন এশার জীবননাশের আশঙ্কা ছিল। এখন তদন্ত করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এদিকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও এশার বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এশার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না -এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‘তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে এশাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এখন তদন্ত করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এশা কী করেছে এবং তার বিরুদ্ধে কী হয়েছে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।’