যে কারণে এখনো পহেলা বৈশাখে চাহিদার শীর্ষে ইলিশ

বৈশাখের প্রথম দিনে ইলিশ খাওয়াকে অনুৎসাহিত করার সচেতনতামূলক প্রচারের মধ্যেও এর চাহিদা কমেনি। অন্য সময়ের তুলনায় বর্ষবরণ উপলক্ষে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বাজারে ইলিশের আমদানিও প্রচুর। তবে দাম বেশ চড়া বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।

শুক্রবার ঢাকার বাজারগুলোতে প্রতিটি ১৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজি বা ১২০০ গ্রাম প্রতি হালি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম প্রতি হালি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম প্রতিটি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ গ্রামের প্রতিটি ইলিশ মাছ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর বেশিরভাগ ইলিশই হিমায়িত।

ঢাকার কাওরান বাজার মাছের আড়তে মিয়ানমার থেকে আমদানি ইলিশ প্রতি ১০ কেজি ওজনের বক্সের ২২টি ইলিশ ৩ হাজার ৪০০ টাকা, ১৯টি ৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং ১৬টি ৫ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রিতা মো. সেলিম জানান, ইলিশ এ সময়ে কম পাওয়া যায়। সরকারের জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির কারণে জেলেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বড় ইলিশ ধরতে গেলে কিছু ছোট ইলিশ ধরা পড়ে। যা অভিযানে ধরা পড়লে শাস্তি রয়েছে। এজন্য জেলেরা তেমন একটা নদীতে যাচ্ছে না। এখন বাজারে যেসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, এর বেশিরভাগ ইলিশ আমদানি ও বর্ষা মওসুমের ফ্রিজে রাখা অর্থাৎ সংরক্ষণ করা ইলিশ।

সরকারি হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরণের মাছ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশই হচ্ছে ইলিশ অর্থাৎ ৪ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। দেশের জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান ১ শতাংশ। যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ মাত্র ৮ বছরের ব্যবধানে এ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।

চট্টগ্রামের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ইলিশের আমদানি হয়েছে ৪৭৯ দশমিক ৯৪৫ মেট্রিক টন ইলিশ। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ হাজার ১১৫ দশমিক ৬১৭ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পুর্নাঙ্গ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর নারায়ন চন্দ্র চন্দ এক প্রেস ব্রিফিং এ দাবি করেন, দেশের মৎস উৎপাদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট মাছ উৎপাদনের (২৭ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন) চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি।

ইলিশের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে আইন যুগোপযোগীকরণসহ সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাটকাসমৃদ্ধ ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য মোট ৩৮ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন চাল প্রদান করা হয়েছে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময় ছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৩টি পরিবারকে মোট ৭ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চারুকলাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি শেষের দিকে। দিনভর জনসাধারণের নিরাপত্তায় অইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ইউএনবি।