জাতীয় নির্বাচনে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা ইসির!

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যাতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র থেকে দ্রুত ভোটের ফলাফল সংগ্রহ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াতে গতিশীলতা আনা যায়। সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, অনলাইন মাধ্যমে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সরাসরি নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহের জন্য কমিশন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ট্যাবলেট (ট্যাবলয়েড কম্পিউটার) প্রদান এবং বিদ্যমান নির্বাচনী ফলাফলের সফটওয়্যার আপডেট করার পরিকল্পনা করছে।

কমিশন জানায়, পরিকল্পনাটি শেষপর্যন্ত বাস্তবায়িত করা গেলে দেশের মোট তিনশ আসনের মধ্যে অধিকাংশের আনঅফিসিয়াল ফলাফল দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যেই ঘোষণা করা যাবে। খবর ইউএনবির।

ইসির জাতীয় পরিচয়পত্রে ভোটার তালিকা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শীর্ষক কমিটি সম্প্রতি এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের এক বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে কমিশন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ করেছিল।কিন্তু এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল কেন না প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে এসে ফলাফল জমা দিতে হতো। এসব জটিলতা শেষে কেন্দ্রীয় ফলাফল ইসির সফ্টওয়্যারে দেয়া হতো এবং রিটার্নিং কর্মকর্তারা সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফলাফল ঘোষণা করতো।

কমিটি এখন এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। ভোট গণনা শেষের পরপরই প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নির্বাচনী ফলাফল ট্যাবলেট ব্যবহার করে সরাসরি সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে সকল স্টেকহোল্ডারের (সংশ্লিষ্টদের) আস্থা অর্জনের জন্য এবং সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষামূলক বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে এই প্রক্রিয়া প্রথমে তারা নিয়ে আসবেন।

তিনি জানান, এই পদ্ধতিতে একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে ট্যাবলেট ব্যবহার করে নির্বাচনী ফলাফলের পরিসংখ্যান এবং সফ্টওয়্যারে সমস্ত ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের সই করা ফলাফল শিটের একটি স্ক্যান করা কপি সংযুক্ত করতে হবে। সফ্টওয়্যারের পরিসংখ্যান এবং স্ক্যান করা কপি উভয়ই ইলেকট্রনিকভাবে মিলে গেলে কমিশন ফলাফল গ্রহণ করবে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেশের প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য মোট ৪২ হাজার ট্যাবলেট প্রয়োজন হবে। আমরা নির্বাচনে সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারব না কেন না তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর ইসির প্রতি অবিশ্বাস জন্মাতে পারে।সেজন্য আমরা এমন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছি যাতে অপেক্ষাকৃত কম অবিশ্বাস এবং সন্দেহ হয়, বলেন তিনি।

কমিটি তাদের বিদ্যমান সফটওয়্যারটি আপডেট করা অপরিহার্য বলে প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি কিছু এলাকা নির্ধারণ করে যেখানে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং ফলাফল সংগ্রহ প্রক্রিয়াতে গতিশীলতা আনতে আইটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমন-অনলাইনে মনোনয়ন জমা,নির্বাচন কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ঝুঁকির বিশ্লেষণ, ভোট কেন্দ্রের স্থান ও ফলাফলের জন্য জিআইএস আবেদন প্রভৃতি। এছাড়া নির্বাচন কমিশন তার মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আইনি/মামলা ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচনী যোগাযোগ ব্যবস্থায় আইটির ব্যাপক ব্যবহার চালু করতে চায়।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, নিয়োগ ও ভোটকেন্দ্র পরিচালনা অত্যন্ত সংবেদনশীল কাজ। সেজন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন এড়ানোর জন্য এবং প্রক্রিয়াটিকে আরো স্বচ্ছ করতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

পাশাপাশি কমিটি অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়ার প্রস্তাব দেয় যা সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সদস্য, গণমাধ্যম ব্যক্তি, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, নারীনেত্রী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা গত বছর ইসির সাথে সংলাপের সময় প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এছাড়া কমিটি নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ, তাদের সম্পর্কে তথ্য ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন সংগ্রহ, তাদেরকে একক পোর্টাল ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী এবং পরিচয়পত্র দেয়ার প্রস্তাব দেয়। দেশের সব এলাকায় হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ক্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানায় কমিটি।