স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা করছে সরকার

চোরাচালান রোধ ও শুল্ক আহরণ বাড়ানোর জন্য স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন পাওয়া প্রতিষ্ঠান এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে অর্থমন্ত্রী আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ নীতিমালার বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।’ নীতিমালা প্রণয়নে সরকার নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে এবং কমিটি ইতোমধ্যে কয়েকবার বৈঠকে বসেছে। কমিটির সুপারিশগুলো যাচাইয়ের পর স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, কমিটি এখন দেশের জুয়েলারি সমিতিগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাব যাচাই করে দেখছে এবং বাজেটের আগেই তা চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর জন্য মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে বলা হয়- নতুন মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক আইন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের পর স্বর্ণ আমদানির জন্য সুনির্দিষ্ট শুল্ক হার প্রয়োজনে প্রত্যাহার করা হতে পরে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রচলিত আমদানি প্রক্রিয়ায় স্বর্ণ ও রূপা আমদানি করা হবে, ব্যাগেজ পদ্ধতি বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নয়। আরো বলা হয়, শুধুমাত্র এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ ও রূপা আমদানি করা যাবে এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকা প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ পাবে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, যে কেউ স্বর্ণ আমদানি করতে পারে। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকা প্রতিষ্ঠান চার শতাংশ শুল্ক দিয়ে এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি যে কেউ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭-এর শর্ত পূরণ করে স্বর্ণ বা রূপা আমদানি করতে পারেন। ব্যাগেজ রুলসের অধীনেও নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ আনা যায়।

কিন্তু স্বাধীনতার পর কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করার নজির নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও অভিযোগ করেছেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমাদানি করতে গেলে তাদের নানা ধরনের জটিলতা এবং ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। তারা জানান, আমদানির আগে তাদের ব্যবসার উৎস এবং কোথায় ও কীভাবে স্বর্ণ বিক্রি করা হবে তা জানাতে হয়। সেই সাথে আমদানি করা পুরো স্বর্ণ বিক্রির নিশ্চয়তা দিতে হয়।

ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, স্বর্ণ আমদানির জন্য তাদের প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। পরে তাদের আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে আমদানি নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হয়। এসব কিছুর পর ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে ব্যাংকে যেতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র ছাড়া কোনো ব্যাংক এলসি করে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, এসব কারণেই জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা সরকারকে আমদানি শুল্ক থেকে বঞ্চিত করে চোরাচালানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ইউএনবি।