বজ্রপাতে আট জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু

দেশের আট জেলা হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, সিলেট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জে বুধবার বজ্রপাতের ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী- হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, লাখাই এবং মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ছয় কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র এ তথ্য জানায়।

নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের বিরাই উপজেলার বসন্ত দাসের ছেলে স্বপন দাস (২০), সিরাজগঞ্জ চৌহালি উপজেলার জালাল উদ্দিন (৬০), হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার হরিলালের ছেলে নারায়ন পাল (৪০), নবীগঞ্জের হাবিবুর রহমানের ছেলে আবু তালিব (২০), হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সুফি মিয়া (৫৫) এবং মাধবপুর উপজেলার রাজকুমার সরকারের ছেলে জহর লাল সরকার (২৩)।

এদিকে সুনামগঞ্জের শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের যুক্ত মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (২৫) এবং ধর্মপাশা উপজেলার দূর্বাকান্দা গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে উজ্জল মিয়া(১৫)। স্থানীয় পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দুবইল ও বাতাসপুর গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- বাতাসপুর গ্রামের কৃষক আনসার আলী (৩০) এবং দুবইল পূর্বপাড়ার কিশোর সোহাগ আলী (১৬)।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকালে মাঠে ধান কাটার সময় উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের বাতাসপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে আনসার আলী বজ্রপাতে মারা যান।

অপরদিকে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল গ্রামের পূর্বপাড়ার সামসুদ্দীনের ছেলে সোহাগ আলী (১৬) মাঠে গভীর নলকূপে কাজ করছিল। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শওকাত আলী বলেন, নিহত প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি কামারগাঁও গ্রামে দুপুরে বজ্রপাতে নুরুল হক (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোড়ারগাঁও গ্রামের চণ্ডু মিয়ার ছেলে।

এদিকে নীলফামারীর জলঢাকায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন-উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালনগ্রাম ডুগডুগি এলাকার মৃত ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী আসমা বেওয়া (৫৫) ও কাঠাঁলি ইউনিয়নের উত্তর দেশিবাই গ্রামের সফর উদ্দিনের ছেলে নুর আমিন (৪০)।

স্থানীয়রা জানায়, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হলে মারা যান তারা। 

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় দুপুরে বজ্রপাতে সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সমতুল্লাহ পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্রসহ দুজন মারা গেছে। নিহতরা হলো- সাইফুল ইসলাম অন্তর (১২) ও কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ (৪৮)। নিহত সাইফুল তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও তালুকনগর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। অন্যদিকে ইয়াকুব আলী শেখ দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামের মৃত হাফেজ শেখের ছেলে।

তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান বলেন, বেলা পৌনে ২টার দিকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা টিফিনের বিরতিতে বিদ্যালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিল। এসময় হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাতে বিভিন্ন শ্রেণির ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়।

মারাত্মকভাবে আহত সাইফুল ইসলাম অন্তরকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। আহত অপর ছাত্রদের দ্রুত দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, সকাল ৯টার দিকে কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ ধান ক্ষেতে কাজ করতে যান। এ সময় বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলার প্রত্যন্ত হাওর নিকলী উপজেলার ছাতিরচর এলাকায় ও পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদপাড়ার মাঈন উদ্দিনের ছেলে শাহ জালাল (২৫) ও পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া এলাকার সুধীর চন্দ্র বর্মণের স্ত্রী দিপালী রানী বর্মণ।

স্থানীয়রা জানায়, নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদপাড়ার শাহ জালাল হাওরের জমি থেকে ট্রলি দিয়ে ধান আনতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া এলাকায় দিপালী রানী বর্মণ বাড়ির উঠোনে কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। পরে পরিবারের লোকজন দিপালীকে আহত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।