যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগে তুরিনকে অব্যাহতি

প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সকল মামলার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখা থেকে আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের সাথে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের গোপন বৈঠক করেছেন। পরে এ সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু আইনমন্ত্রণালয় তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন তারাই পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে ওয়াহিদুল হকের মামলার টিমের সদস্য হিসেবে অপর প্রসিকিউটর তাপস ক্রান্তি বলকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের চিঠি পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ একজন যুদ্ধাপরাধীর সাথে গোপনে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা যদি সত্যি হয় তবে মন্ত্রণালয় অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে।’

এ বিষয়ে ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের সকল মামলা পরিচালনা থেকে অব্যহতি দিয়ে আমাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত চলছে, তাই এ মুহূর্তে মন্তব্য করবো না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে পোস্ট দিয়েছি সেটাই আমার অফিসিয়াল বক্তব্য।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুরিন আফরোজ নিজের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে বহাল আছি। আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি।’

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘৭ মে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে সংশ্লিষ্ট ওয়াহিদুল হকের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। পরদিন ৮ মে তাকে প্রসিকিউশনের সব দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চিফ প্রসিকিউটরের দুটি চিঠি এবং ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তার (তুরিন আফরোজ) সাথে আসামির কথোপকথনের (গত বছর ১৮ ও ১৯ নভেম্বর) সিডিসহ যাবতীয় নথি বুধবার সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধের মামলায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ওয়াহিদুল হককে ট্রাইব্যুনালে হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তুরিন আফরোজ ফোন করে আসামির সাথে বোরখা পরে একটি হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশের বিষয়টি ওয়াহিদুলকে জানান। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নজরে এলে প্রসিকিউটর তুরিনকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।

এর আগে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এছাড়া প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকেও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। ইউএনবি।