এসএসসি পরীক্ষায় এক এতিম প্রতিবন্ধীর অসাধারণ সাফল্য

হাতের তালু দিয়ে লিখে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে অমল চন্দ্র রায় নামে এক এতিম প্রতিবন্ধী। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সাহাপাড়া গ্রামের কমল এবছর স্থানীয় গোবিন্দ আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

প্রতিবেশী ও শিক্ষকরা জানান, অদম্য মেধাবী কমল শিশু শ্রেণি থেকেই ক্লাসে ছিল প্রথম। পিএসসিতে জিপিএ-৫ সহ বৃত্তি এবং জেএসসিতেও জিপিএ-৪.৯৫ অর্জন করে সে। এসএসসির ফলাফলে তার ইচ্ছাশক্তি আরো বেড়ে গেছে।

একদিন চিকিৎসক হয়ে তার মতো অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখলেও আর্থিক অনটনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এতিম কমল চন্দ্রসহ তার মা, স্কুল শিক্ষক এবং প্রতিবেশীরা।

জন্ম থেকেই দুই হাতে কোনো আঙুল ছিল না কমলের। মাত্র দুই বছর বয়সে বজ্রপাতে মারা যান কৃষি শ্রমিক বাবা স্বরনার্থী রায়। সেই থেকে বড় দুই ভাইয়ের সাথে প্রতিবন্ধী কমলকে নিয়ে মা লিলি রায়ের সংসার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে মা লিলি রায় তিন সন্তানকে দেখভাল করতেন। দিনমুজুর বড় ভাই সম্প্রতি বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।

প্রতিবন্ধী কমলসহ তার আরেক বড় ভাইকে নিয়ে মা লিলি রায় এখনো জীবন যুদ্ধের এগিয়ে চলা সৈনিক। সহায় সম্বল বলতে পাঁচ শতাংশের ভিটেমাটি মাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি কমলও মাঝে মধ্যে তার ওই বড় ভাইয়ের সাথে অন্যের জমিতে চুক্তিভিত্তিক কৃষি শ্রমিক হয়ে কাজ করতো। কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও সে থেমে থাকেনি। লেখাপড়ার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই তাকে আরো অদম্য মেধাবী করে তুলেছে।

বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে নিয়মিত স্কুলে যেতো। এজন্য শিক্ষকরাও তাকে বেশ স্নেহ করতেন। স্কুল ক্লাসের বাইরেও তারা নিজেদের মতো করে তাকে সহযোগিতা করতেন। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নন এমপিওভুক্ত এই স্কুল থেকে এবার ২৬ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে সাতজন জিপিএ-৫ সহ ২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়।

এদিকে দুই হাতে কোনো আঙুল না থাকাকে কোন সমস্যা মনে করে না কমল চন্দ্র রায়। সে বলে, ‘এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয় না। আমি আরো লেখাপড়া করতে চাই। চিকিৎসক হয়ে আমার মতো অসহায়দের সেবা করতে চাই। কিন্তু কীভাবে যে কী হবে, বুঝতে পারছি না।’ কথাগুলো বলতেই কেঁদে ফেলেন কমল।

গোবিন্দ আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, শিশু শ্রেণি থেকেই কমল মেধাবী ছিল। তার হাতে আঙুল না থাকলেও হাতের লেখা বেশ পরিপাটি। এই ফলাফল তার ইচ্ছাশক্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ লেখাপড়া নিয়ে আমরাও চিন্তিত।

স্থানীয় সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান বলেন, কমল প্রতিবন্ধী সত্ত্বেও অন্যের জমিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতো। তার এমন ফলাফলে আমরাও অবাক হয়েছি। এখন আমরা তাকে সহযোগিতা করলে সে অবশ্যই একদিন ভালো চিকিৎসক হতে পারবে বলে আমি আশা করি।