রাতে শেষ হচ্ছে প্রচারণা, কে হচ্ছেন খুলনার নগরপিতা?

আর মাত্র একদিন পর খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। পছন্দের নগরপিতা নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন খুলনাবাসী। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে রবিবার দিবাগত রাত ১২টায়। একই সাথে বহিরাগতদের শনিবার রাত ১২টার মধ্যে সিটি এলাকা ত্যাগ করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রবিবার দুপুর থেকে থেকে মাঠে নেমেছে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। নির্বাচনে সাড়ে নয় হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপি ব্যাটেলিয়ান, আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন। পাশাপাশি থাকবে র‌্যাবের ৩২টি টহল দল এবং ৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স।

একই সাথে নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সিটি নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের লক্ষ্যে সকাল থেকে দায়িত্বপালন করছেন ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবার মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) এবং সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।

এছাড়া নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এবারের নির্বাচনে খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। এ নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র রয়েছে ২৩৪টি এবং ৩৫টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

এবার ভোট কক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৫৫টি। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছে ৪ হাজার ৯৭২ জন।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী জানান, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ব্যালট পেপার, সিল, কালিসহ নির্বাচনী মালামাল খুলনায় এসেছে। এসব মালামাল বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। এই নির্বাচনে ১ হাজার ৮১০টি ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে স্ব স্ব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের এসব মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হবে।

তিনি আরো জানান, রবিবার বিকাল থেকে ২২ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিম দায়িত্বপালন করবেন। তারা নির্বাচনের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন। একই সাথে ১৬ মে পর্যন্ত ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, রবিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে। এরপর কোনো প্রার্থী আর প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এছাড়া শনিবার রাত ১২ টার মধ্যে বহিরাগতদের সিটি থেকে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ নির্বাচনে ২টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। এ দু’টি কেন্দ্রে আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম’র মাধ্যমে মক ভোটিং কার্যক্রম। এছাড়া তিনটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। রবিবার দুপুরের পর থেকে ১৬ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নামছে। এছাড়া নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন নিশ্চিতকরণে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে তারা নিজ নিজ অধীক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া সোমবার ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি জানান।

এদিকে র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনে র‌্যাবের ৩২ টি দল দায়িত্ব পালন করবে। যার প্রতিটি টিমে ৮ জন সদস্য থাকবে। এছাড়া ৪ টি স্টাইকিং ফোর্স থাকবে। এ দলে ১০ জন করে সদস্য থাকবে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোনালী সেন বলেন, এ নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপি ব্যাটেলিয়ান ও আনসার সদস্যরা দায়িত্বপালন করবেন। এর মধ্যে পুলিশের পাশাপাশি ১৬ প্লাটুন বিজিবি, সাড়ে ৪ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য থাকবে। ৯শ’ অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি সদস্য থাকবে।

নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশের ৭০টি দল দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটের দলের সাথে একটি করে পুলিশের দল থাকবে। ইউএনবি।