‘বাংলাদেশ করেছে, আমরা চাই সকলেই এটি করুক’

উন্নয়ন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রতিবন্ধিতা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ২য় আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এটি করেছে, আমরা চাই সকলেই এটি করুক।’

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এতে ‘সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক’ বাস্তবায়নে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তভাবে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তকরণের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে নীতিনির্ধারক, কর্মী, বিশেষজ্ঞ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। দুর্যোগের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দুর্যোগকালীন সময় ‘করণীয় তালিকা’ নির্ধারণ করে একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, টর্নেডো, বজ্রপাত, ভূমিধস প্রভৃতি দুর্যোগের বারবার মুখোমুখি হচ্ছে দেশ। সেজন্য স্থিতিস্থাপকতাসম্পন্ন বিল্ডিং গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সকলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লিঙ্গ, জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ আমরা সব ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি’, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সরকার সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ঝুঁকি, তথ্য উন্নয়ন এবং বড় বিপর্যয়ের মোকাবেলার জন্য জাতীয় জরুরি অপারেশন কেন্দ্র (এনইওসি) চালু করেছে।

দেশে দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে গত সাড়ে নয় বছরের মধ্যে প্রায় চার হাজার ৮৮টি ঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ২৫৫টি বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২২০টি ঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি উল্লেখ করেন, ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৬৬টি ত্রাণ গুদামের নির্মাণকাজ চলছে। দুর্যোগকালীয় সময় নারী, শিশু, বৃদ্ধ গর্ভবতী নারী ও অক্ষম ব্যক্তিদের আশ্রয়কেন্দ্রে দ্রুত স্থানান্তর করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্যোগের সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রতিবন্ধী কাজল রেখা। স্বাগত ব্ক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. শাহ কামাল।

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের টেকসই সুরক্ষা দেয়ার জন্য একটি সংবেদনশীল সমাজ গড়ে তোলা।

থাইল্যান্ডের সংসদ সদস্য মুনথেয়িন বুনটান অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অটিজম বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত সায়মা হোসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মামি মিজুতোরির বার্তা অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধিতা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিশ্বের ৩৩টি দেশের প্রায় ১১০ জন বিশেষজ্ঞ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

সম্মেলনে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, ১৪টি পার্শ্ব অধিবেশন এবং দুটি বিশেষ অনুষ্ঠান থাকবে উল্লেখ করে মন্ত্রী মায়া বলেন, সম্মেলন কেন্দ্রে ১০০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ইউএনবি।