এবারও পাহাড় ধসের আশঙ্কা: ঝুঁকিতে সাড়ে ৫০০ পরিবার

রাঙ্গামাটিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থার মধ্যে জেলা শহরে পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় সাড়ে ৫০০ পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ভারী বৃষ্টি হলেই ভয়-আতঙ্ক নেমে আসে পাহাড়ের এসব পরিবারে মধ্যে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্ধারকারী দলনেতা নুরুল আবছার বলেন, বর্ষার আগে যদি এসব ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া না হয় তাহলে বর্ষার মৌসুমে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রশাসনের উচিৎ এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দ্রুত বর্ষার আগে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পাহাড়ের ঝুকিঁপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে বসবাসের উপর সর্তকতা জারি করা হলেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হলে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে নারাজ পাহাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের বেশীর ভাগই দিনমজুর খেটে-খাওয়া সহায়সম্বলহীন মানুষ। অল্প টাকায় পাহাড় কিনে টিন ও কাঠের বসতি গড়ে মাথা গোজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। তাই নিষেধাজ্ঞা এবং জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা সত্ত্বেও নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে নারাজ পাহাড়ে বসবাসকারী এসব বাসিন্দা।

বাসিন্দা আমেনা খাতুন জানায়, আমরা কই যাবো, আমাদের থাকার কোনো জায়গা নাই। যদি সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা পাহাড় ছেড়ে পুনর্বাসিত এলাকায় চলে যাবো।

পাহাড়ের ভেদভেদী এলাকার আব্দুল মালেক বলেন, মৃত্যুর ভয় নিয়ে আমরা এখানে বসবাস করছি। এছাড়া কোথায় যাবো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্তকতামূলক সাইন বোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। কিন্তু কোথায় যাবো, বলছে না।

তিনি বলেন, আমাদেরকে যদি স্থায়ীভাবে থাকার কোনো জায়গা করে দেয়া হয় তাহলে আমরা সে স্থানে চলে যাবো।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, বর্ষার আগেই সম্ভাব্য পাহাড় ধস ও দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সামনে বর্ষার আগেই ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক, রাস্তা-ঘাট, সেতু মেরামত ও পুনঃনির্মাণ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পাহাড় ধস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম হিসেবে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে তাতে বসবাস করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও সচেতনামূলক বিষয়ক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষের যানমালের নিরাপত্তার জন্য ক্ষণস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি বৃষ্টিপাত শুরু হয় তা হলে ঝুঁকিতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের যত দ্রুত সম্ভব অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হবে ।

‘প্রাথমিকভাবে ভূমিধসের প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করে পাহাড়ের সুরক্ষা নিশ্চিত, পাদদেশের বসতি সরানো, কারিগরি বিষয়গুলো বাস্তবায়নের বিষয়েও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, বলেন জেলা প্রশাসক।’

প্রসঙ্গত, বছর ১৩ জুন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে উদ্ধার অভিযানে গিয়ে মারা যায় পাঁচ সেনা সদস্য। বিধস্ত হয় ১২শ বাড়ি-ঘর। ইউএনবি।