খালেদার তিন মামলার জামিন আবেদনের আদেশ রোববার

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার তিনটি মামলার জামিন আবেদনের আদেশ রোববার হবে বলে জানিয়েছেন আদালত। খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'আদালত তিনটি জামিন আবেদনই রোববারের কার্যতালিকায় আদেশের জন্য রাখবেন।' 

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চ ‘গাড়িতে পেট্রোলবোমা মেরে অগ্নিসংযোগ ও হত্যার অভিযোগে’ কুমিল্লার এক মামলায় খালেদার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করেন। পরে নড়াইলের মানহানির মামলায় করা জামিন আবেদনের শুনানির উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তবে আদালত রবিবার তিনটি মামলাতেই একসাথে শুনানি নিয়ে আদেশের কথা জানান। 

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, 'পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার মামলাটির শুনানি শেষ হয়েছে। আরো দুটি মামলায় করা আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তিনটি মামলা আগামী রবিবার কার্যতালিকায় থাকবে। সবগুলো মামলার আদেশ আদালত একসাথে দেবেন।'

এর আগে কুমিল্লায় পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা সংক্রান্ত অভিযোগে করা মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'এ মামলায় জামিনের আবেদন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেখানে আবেদন বিচারাধীন রেখে হাইকোর্টে কোনো আদেশ দেয়া সঠিক হবে না।' অন্যদিকে বিচারিক আদালতে শুনানি বিলম্ব হলে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারেন-এমন নজির তুলে ধরেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি বলছে, গত ১৬ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দণ্ডপ্রাপ্ত মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তবে তার কারামুক্তির জন্য আরো ছয়টি মামলায় জামিন নিতে হবে। পাশাপাশি তিনটি মামলায় হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের প্রয়োজন। এ অবস্থায় গত ২০ মে তিনটি (কুমিল্লার দুটি এবং নড়াইলের একটি) মামলায় জামিন আবেদন দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

কুমিল্লায় হত্যা মামলা: ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে প্রেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় সাত যাত্রী মারা যান এবং আরো ২৫/২৬ জন গুরুতর অসুস্থ হন।

এ ঘটনায় পরদিন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান ৫৬ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচারকালে দায়রা আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই জামিন আবেদনের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখা হয়েছে।

কিন্তু এ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে কুমিল্লার মামলা: ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দার পুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়।

মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলমান। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন আদালত। পরে গত ২৩ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখেন। এ অবস্থায় শুনানি না করে এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়েছে।

নড়াইলে মানহানি মামলা: ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। এ ঘটনায় একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইলে মানহানির মামলা করা হয়। স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রায়হান ফারুকি ইমাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি জামিনযোগ্য।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ আদালত-৫ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার দিন থেকে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি।