মাদকবিরোধী অভিযান: সারাদেশে আরও ৯ জন নিহত

দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, শেরপুর, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা এবং নেত্রকোনায় এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নেত্রেকোনায় দুজন এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, শেরপুর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধা জেলায় একজন করে নিহত হয়েছে।

রাজধানীর তেজগাঁ শিল্প এলাকায় শুক্রবার ভোরে র‌্যাব-২ এর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামরুল নামে তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কামরুল কয়েকটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব সদস্যরা বেশ কিছু অস্ত্র, গুলি এবং ইয়াবা উদ্ধার করেছে।

ময়মনসিংহ শহরের পুরোহিতপাড়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় গোয়েন্দা পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজন মিয়া (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত রাজন মিয়া ওই এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে। তার নামে মাদক আইনে ৫টি মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪২০ পিস ইয়াবা এবং গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।

নেত্রকোনা সদর উপজেলাধীন মদনপুর ইউনিয়নের মনাং এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত পরিচয়ের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় বন্ধুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭০৫ গ্রাম হেরোইন, ৩ হাজার ৫ পিস ইয়াবা ও ২টি পাইপগান উদ্ধার করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান।

শেরপুরে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালু ডাকাত (২৮) নিহত হয়েছে। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের লাশ শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আজাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ ২১টি মামলা রয়েছে।

এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত কালুর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার কালুকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কথিত বন্দুকযুদ্ধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামাল ওরফে ফেন্সি কামাল নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এসময় গ্রেপ্তার হয়েছে আরো দুই মাদক ব্যবসায়ী।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোজ কুমার দে জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি ও ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কামালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে।

গাইবান্ধায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জুয়েল নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাটে শুক্রবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি খান মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাদক সরবরাহ ও বিক্রি করছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশ জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে।

শুক্রবার গভীর রাতে জুয়েলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ তাকে সাথে নিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে তার লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে জুয়েলকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত জুয়েলের বিরুদ্ধে অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পৌর এলাকার আড়পাড়ায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামীম সরদার (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামীম আড়পাড়া এলাকার মমিন সরদারের ছেলে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমানের দাবি, রাতে মাদক উদ্ধারে উপজেলার পৌর এলাকার আড়পাড়ায় অভিযানের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। পরে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শামীমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত শামীমের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় ৯টি মাদক মামলা রয়েছে। সে উপজেলার অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলেও জানান তিনি।

এদিকে সাতক্ষীরা পুলিশ দাবি করেছে, জেলার কলারোয়ায় মাদক ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইউনুস আলী দালাল (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইউনুস আলী দালাল কলারোয়া উপজেলার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহ দালালের ছেলে।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথের দাবি, রাত ২টার দিকে সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি পাকা রাস্তার পাশে সীমান্ত এলাকায় দুইদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে তারা খবর পান। তাৎক্ষণিক পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫ রাউন্ড ফাঁকা শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে দুইপক্ষই ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে বিলের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইউনুসকে পাওয়া যায়। দ্রুত তাকে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইউনুসকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শ্যুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করে। ওসি আরো জানান, নিহত ইউনুস আলী দালাল একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ইউএনবি।