বহুতল ‘বাড়ি দখলে’ যুবলীগ নেতার অমানবিক কাণ্ড

পিরোজপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হকের বিরুদ্ধে একটি হিন্দু পরিবারকে বহুতল বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তা দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাড়ির গ্যাস, পরে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় নয় মাস ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এমনটিই দাবি করা হয়েছে।

গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, জেলা শহরের বাইপাস সড়কের মাছিমপুর এলাকার এই বাসার পঞ্চম তলায় থাকেন গীতা রানী মজুমদার। তিনি পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ। বাসায় তার সঙ্গে অনার্স পড়ুয়া একমাত্র মেয়েও থাকনে। নিজ বাড়িতে সার্জিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গীতা রানীর স্বামী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার।

পরে বাড়িটির অর্ধেক মালিকানা যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু তিনি ক্লিনিকটি করায়ত্ত করার পর এখন পুরো বাড়িটিও দখল করতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেন গীতা রানী।

তিনি আরও জানান, গত বছরের আগস্ট মাসে বাসার পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন ওবায়দুল হক। রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আনতে এবং বাসায় আসা-যাওয়া করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

গীতা রানীদের বাসার কেরোসিনের একটি চুলা রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হয় তাদের। গোসল করতে হয় অন্যের বাসায় গিয়ে। এ

এ বিষয়ে তিনি জানান, আমারা আতঙ্কের মধ্যে আছি। এভাবে কত দিন বেঁচে থাকতে পারব জানি না। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।’

এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ গভীর রাতে বাসায় ঢুকে বাড়ির মালিক বিজয় কৃষ্ণ হালদারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। তাদের মারধরের পাশাপাশি দামি জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা। পরে অদূরে একটি বাড়িতে তাদের রেখে আসা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ দিন পর স্থানীয় এমপি এ কে এম এ আউয়ালের হস্তক্ষেপে ওবায়দুল হককে প্রধান আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়।

ওই মামলা করার পর থেকেই নির্যাতন আরও বেড়েছে জানিয়ে গীতা রানী জানান, ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছেন তিনি।

গীতা রানীর অভিযোগ, এখন তাদের অমানবিক পন্থায় বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে ওবায়দুল হক। তাই দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে পরিবারের নিরাপত্তা ও প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন গীতা রানী।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবলীগ নেতা ওবায়দুল হক। তিনি উল্টো বলছেন, ‘দুই কোটি টাকা দিয়ে আমি ক্লিনিকটির অর্ধেক মালিকানা কিনেছিলাম। পরে আরও টাকা দিয়েছি পুরোটা কেনার জন্য। কিন্তু বিজয় কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি।’

পরিবারটিকে বাসা থেকে বের করে দেয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল তাদের আবার ওই বাসায় তুলে দেওয়ার কারণে এখন সরানো যাচ্ছে না বলেও জানান ওবায়দুল হক।

বাড়ির মালিকানা নিয়ে করণীয় কিছু নেই উল্লেখ করে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির বলেন, ‘পরিবারটির ওপর অমানবিক আচরণ করা হলে তা আমি খতিয়ে দেখবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এমন অমানবিক কাজ যে-ই করুন, তিনি পার পাবেন না। ব্যবস্থা নেয়া হবে।’