ঐশীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

আলোচিত পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যায় হাইকোর্টের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেছে তাদের কন্যা ঐশী রহমান। একই সঙ্গে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল দেয়া ঐশীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আবেদন জানিয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল দুটি বেশ কয়েকদিন আগে দায়ের হলেও সোমবার এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে ঐশীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী তার খালাস চেয়ে আপিল করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এখন দুটি আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি হবে।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড ও তার বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে ঐশী। ডেথরেফারেন্স ও ঐশীর আপিল-জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ৫ জুন হাইকোর্ট সাজা কমিয়ে ঐশীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া হাইকোর্ট মিজানুরকে খালাস দেন।

গত বছরের ২২ অক্টোবর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে ঐশীর সাজা কমানোর পাঁচটি যুক্তি তুলে ধরেন হাইকোর্ট। এক. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়াই এবং মানসিক বিচ্যুতির কারণেই ঐশী জোড়া খুনের ঘটনা ঘটায় এবং সে অ্যাজমা, ওভারি সিস্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। দুই. তার (ঐশী) দাদি এবং মামাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তিন. ঘটনার সময় তার বয়স ১৯ বছরের কাছাকাছি, তখন সে সাবালকত্ব পেয়েছে মাত্র। চার. ঐশীর বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের কোনো (ফৌজদারি মামলা) রেকর্ড নেই। পাঁচ. ঘটনার দুই দিন পরই সে স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করে। 

রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটি কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে, তেমনটি নয়। বরং কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে সুস্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই রায়ের কপি হাতে পেয়ে উভয়পক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করেন।