ফিরে দেখা বিশ্বকাপ ১৯৬৬: ট্রফি চুরি ও ইংল্যান্ডের স্বপ্নপূরণ
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
দুনিয়া কাঁপানো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা সুরক্ষিত ছিল। সেই ট্রফিটাই উধাও যুদ্ধের কয়েক বছর পর! তাও আবার বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে! লজ্জাজনক ঘটনাটা ঘটে ১৯৬৬ সালে। যখন বিশ্বকাপ আয়োজনের সব প্রস্তুতিই সেরে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু যে ট্রফিটার জন্য এত যুদ্ধ, সংগ্রাম সেটাই শুধু ছিল না ফিফার কাছে।
অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, বিশ্বকাপ নিয়েই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। বিশ্বকাপ আয়োজন হবে কি না তা নিয়েও দেখা দেয় সংশয়। রীতিমতো ইংল্যান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার উপক্রম হয়। তাই বলে সব আয়োজন তো তার ভেস্তে দেওয়া যায় না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফুটবল মহাযজ্ঞের জন্য একটা রেপ্লিকা ট্রফি বানিয়ে ফেলে ফিফা।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কয়েকদিন শেষে ইংল্যান্ড ও ফিফার মান বাঁচিয়ে দেয় একটি কুকুর। নকল ট্রফিটার প্রদর্শনীরও আর দরকার পড়েনি। আসল ট্রফিটা যে পাওয়া যায় বিশ্বকাপের আগেই। পিকল্স নামের একটি কুকুর জুলে রিমে ট্রফিটা উদ্ধার করে। ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়ানো ট্রফিটা আবিষ্কার করে কুকুরটি। তখন বিশ্বকাপের তারকা খেলোয়াড়দের ছাপিয়ে আলোচনার ইস্যু হয়ে ওঠে সেই কুকুরটিই!
শুধু ট্রফি হারানোর ঘটনা-ই নয়, অষ্টম বিশ্বকাপ আয়োজন করতে বেশ বেগ পেতে হয় ইংল্যান্ডকে আরো কিছু কারণে। ফিফার অদ্ভুত নিয়মের প্রতিবাদে আসর বয়কট করে বসে আফ্রিকার দেশগুলো। তাতে অবশ্য বিশ্বকাপ আয়োজন থেমে থাকেনি। এই আয়োজনের স্বত্ব পাওয়া নিয়েও ইংলিশদের বেশ লড়াই করতে হয়। শেষ অবধি ভোটাভুটির লড়াইয়ে মহাদেশীয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পশ্চিম জার্মানি ও স্পেনকে হারাতে সক্ষম হয় তারা।
বিশ্বকাপের আগের আসর আফ্রিকানদের সঙ্গে বয়কট করেছিল এশিয়ার দলগুলোও। তবে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ দিয়ে এশিয়ান দলগুলো ফিরে আসে। তবে জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া নয়, ১৯৬৬ বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পায় উত্তর কোরিয়া। তাদের সঙ্গে পর্তুগালের বিশ্বকাপে খেলতে পারার সুযোগ প্রাপ্তিও ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
স্বাগতিক এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বাদ দিয়ে বরাবরের মতো ১৯৬৬ সালেও বাছাইপর্বের মাধ্যমে ১৪টি দল চূড়ান্ত করে ফিফা। ওই বিশ্বকাপ খেলা দলগুলো হলো: ইংল্যান্ড (স্বাগতিক) ব্রাজিল (স্বাগতিক), ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, স্পেন, পর্তুগাল, সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি, উত্তর কোরিয়া, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, চিলি ও উরুগুয়ে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে শিরোপা ধরে রাখা দ্বিতীয় ও সর্বশেষ দল ব্রাজিল। কিন্তু ১৯৬৬ হ্যাটট্রিক জয়ের যে স্বপ্ন নিয়ে সেলেকাওরা মিশন শুরু হয়, সেটা থমকে যায় গ্রুপ পর্বেই! আসলে ওই আসরের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর স্লোগানই হয়ে উঠেছিল ‘ব্রাজিল ঠেকাও’। অন্য দিকে দেশের মানুষের প্রত্যাশার চাপ। চাপটা সামলাতে পারেনি ব্রাজিল। হাঙ্গেরি ও পর্তুগালের কাছে হেরে গ্রুপপর্বেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় তারা।
অন্য দলগুলোর টার্গেট ব্রাজিল হয়ে উঠলেও বুলগেরিয়ার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছিলেন ‘কালো মানিক’ খ্যাত পেলে। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বুলগেরিয়ান খেলোয়াড়দের একের পর এক ট্যাকলের শিকার হয়ে আসর থেকেই ছিটকে যান এই মহাতারকা। ব্রাজিলের যখন সর্বনাশ, ওই টুর্নামেন্টটা উত্তর কোরিয়ার জন্য হয়ে উঠেছিল পৌষ মাস। অভিষেকেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছিল এশিয়ান দলটি।
কোরিয়ানদের রূপকথার পথচলা থামিয়ে দেয় ইউসেবিওর পর্তুগাল। অথচ পর্তুগিজদের জালে পরপর তিনবার বল জড়িয়ে সেমিফাইনালের আশাটা ভালোভাবেই জাগিয়ে তুলেছিলো উত্তর কোরিয়া। তিন গোল হজম করার পর পর্তুগাল যেভাবে ফিরে আসে, সেটার বিশেষণ এক কথায় হতে পারে অবিশ্বাস্য। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্পগুলোর একটি হয়ে আছে।
ফাউলের জন্য আগের আসরের চিলি-ইতালি ম্যাচটা বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। যেটার কম-বেশি প্রভাব থাকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে আর্জেন্টিনার লড়াইটা হয়ে উঠেছিল শরীরী ফুটবলের বিশ্রী প্রদর্শণী। ম্যাচটিতে বেপরোয়া খেলোয়াড়দের থামাতে কয়েক দফা মাঠে নামতে হয়েছে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে। ম্যাচ শেষে দেখা যায় তার চূড়ান্ত প্রভাব।
দুই দল জার্সি পর্যন্ত অদল-বদল করেনি। ইংলিশরা সৌজন্যতা দেখানো দূরে থাক, স্বাগতিক কোচ আলফ র্যাসে রীতিমতো তুমুল বিতর্কের জন্ম দেন আর্জেন্টাইনদের ‘এনিমেল’ বলে গালি দিয়ে! যদিও পরে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চান ইংল্যান্ড কোচ।
বহুল আলোচিত ম্যাচে ১-০ গোলে জিতে সেমিফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারায় ইংলিশরা। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া পর্তুগিজদের দুঃস্মৃতির ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ এনে দেন ইউসেবিও। আসরে সর্বোচ্চ নয় গোল করে ‘কালো চিতা’ খ্যাত এই কিংবদন্তি জিতে নেন গোল্ডেন বুট।
আসরের উদীয়মান সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতিটা উঠে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের হাতে। জার্মানি যে ফাইনালে উঠেছিলো, তাতে এই কিংবদন্তির অবদানই ছিলো সবচেয়ে বেশি। কিন্তু স্বপ্নের আসরটায় রূপকথার সমাপ্তি টানতে পারেননি বেকেনবাওয়ার।
মহানাটকীয় ফাইনালে শুরুতে হেলমটের গোলে এগিয়ে থেকেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি জার্মানি। তবে নির্ধারিত নব্বই মিনিটে নাটকীয় একটা ম্যাচ উপহার দেয় দুই দল। ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে ২-২ গোলে। অতিরিক্তি ত্রিশ মিনিটে ৪-২ গোলে জার্মানদের হারিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে নেয় ইংল্যান্ড। ইংলিশদের তৃতীয় গোলটা আবার বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত গোল হয়ে আছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.