স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায় রূপকথার আইসল্যান্ড

বরাবরের মতো এবারো বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে ৩২টি দল। এসব দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় চমকের নাম আইসল্যান্ড। বরফে আচ্ছাদিত দেশটি প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চের টিকিট নিশ্চিত করে ফুটবল দুনিয়াকে উপহার দিয়েছে বিস্ময়। রাশিয়াতে স্বপ্নের অভিষেকের প্রহর গুনছে ইউরোপের নতুন এই দলটি।

আটলান্টিক মহাসাগর সীমারেখায় অবস্থিত দেশটি মূলত একটা ছোট্ট দ্বীপ। যার আয়তন মাত্র ৪০ হাজার বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। যা নতুন একটা রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। কারণ বিশ্বমঞ্চে পৃথিবীর সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে আইসল্যান্ডের। এর আগে ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে রেকর্ডটা গড়েছিল আফ্রিকান দেশ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো। দেশটির মোট জনসংখ্যা ১.৩ মিলিয়ন।

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেই স্বপ্নপূরণ হতে পারতো আইসল্যান্ডের। ওই আসরে বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও মূলপর্বের টিকিট পায়নি দ্বীপ রাষ্ট্রের দেশটি। ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে প্লে-অফ ম্যাচে কপাল পুড়েছিল তাদের। আইসল্যান্ডের স্বপ্নের সমাধি করে ব্রাজিল বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় মডরিচ-মান্দজুকিচদের ক্রোয়েশিয়া। অবশেষে স্বপ্নটা সত্যি হলো গত বছরের ৯ অক্টোবর। বিশ্বকাপের টিকিট পায় আইসল্যান্ড।

তার ঠিক এক বছর আগে আবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হয় আইসল্যান্ডের। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে প্রথম আসরেই চমকে দিয়েছিল তারা। ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে উঠেছিল নক আউট পর্বে। কিন্তু স্বাগতিক ফ্রান্স তাদের পথচলা থামিয়ে দেয়। দুই বছরের ব্যবধানে আরো বড় মঞ্চে উঠতে যাচ্ছে আইসল্যান্ড। এবারো তারা খুব করে চাইছে ইউরোর মতো বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিতে।

১৯৩০ সালে ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছিল আইসল্যান্ডের। বহু বছর সংগ্রামের পর হঠাৎ করেই গাঁ ঝাড়া দিয়ে উঠেছে দেশটি। দলটির বর্তমান প্রজন্মের বেশ কিছু ফুটবলারের কল্যাণেই এই বিপ্লব ঘটিয়েছে আইসল্যান্ড। কিন্তু এর আগে দেশটিতে কখনোই ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল না। দেশটির প্রধান খেলা হচ্ছে হ্যান্ডবল। এ ছাড়া আইস হকিও জনপ্রিয় সেখানে।

ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবং এর প্রসার ঘটানোর প্রায়াসটা অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই চালিয়ে যাচ্ছিল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব আইসল্যান্ড। সারা দেশে বয়সভিত্তিক ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আইসল্যান্ড তাদের ক্লাবগুলোর জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সরবরাহ করেছে। এসব ক্লাব এবং বয়সভিত্তিক ফুটবল থেকেই বেরিয়ে এসেছে একঝাঁক প্রতিভাবান খেলোয়াড়। এ ছাড়া তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত ইনডোর ফুটবলের ব্যবস্থা করা হয়েছে দেশটিতে।

আইসল্যান্ডের এই ফুটবল বিপ্লবের নেপথ্য নায়ক হিমির হালগ্রিমসন। এই কোচের ছোঁয়াতেই বদলে গেছে দেশটির ফুটবল। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক সাফল্য উপহার দিয়ে আসছেন তিনি। যেটার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও। গেল মার্চে ইতিহাসের সেরা র্যাঙ্কিং ১৮ নাম্বারে চলে এসেছিল আইসল্যান্ড। যদিও আপাতত চার ধাপ পিছিয়ে তারা।

গেল কয়েক বিশ্বকাপে কোনো না কোনো দল চমক হিসেবে হাজির হয়েছিল। এবার সম্ভাব্য জায়ান্ট কিলার হিসেবে ভাবা হচ্ছে আইসল্যান্ডকে। রাশিয়ায় রূপকথা লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ার বয়েজরা। কিন্তু এ যাত্রায় বড় একটা দুশ্চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আইসল্যান্ডকে। হাঁটুর ইনজুরিতে ভুগছেন দলের স্বপ্নদ্রষ্টা গিলফি সিগুর্ডসন। আইসল্যান্ডের বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়ার আসল নায়ক ছিলেন এই এভারটন মিডফিল্ডারই।

তাকে ঘিরেই বিশ্বকাপের রণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন আইসল্যান্ড কোচ। হাল গ্রিমসন আশাবাদী কয়েক দিনের মধ্যেই ফিট হয়ে উঠবেন দলের প্রাণভোমরা। কিন্তু সিগুর্ডসন দলে ফিরলেও বিশ্বকাপে আইসল্যান্ডকে অগ্নিপরীক্ষাই দিতে হবে। কারণ ‘ডি’ গ্রুপে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছে সেই ক্রোয়েশিয়া। এর সঙ্গে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। অন্য দলটা হলো আফ্রিকান পরাশক্তি নাইজেরিয়া। ১৬ জুন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে স্বপ্নযাত্রা শুরু করবে আইসল্যান্ড।