সৌদি আরব। মরুর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা দেশটি এক সময় এশিয়ার ফুটবল মাতিয়েছিল। এই মহাদেশের সবচেয়ে বড় দল হিসেবেই সুখ্যাতি ছিল তাদের। কালের বিবর্তনে সেই দলটিই এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। ১৯৯৬ সালে শেষবার এশিয়ার বিশ্বকাপ জেতা দলটি বিশ্বকাপের আসরে পরিণত হয়ে খর্বশক্তির দল হিসেবে।

saudi arab world cup 2018 team

এনিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে রাশিয়ায় যাচ্ছে সৌদি আরব। এক সময় এশিয়ান ফুটবলের হর্তাকর্তাদের বিশ্বমঞ্চে অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। অভিষেক আসরে অবশ্য খুব একটা খারাপ করেনি তারা; উঠেছিল নকআউট পর্বে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে মরুর দেশটি হারিয়েছিল মরক্কো ও বেলজিয়ামকে। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইডেনের কাছে ৩-১ গোলে হেরে থেমে যায় তারা। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে ওটাই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য হয়ে আছে।

প্রথম আসরে দ্যুতি ছড়ানো সৌদি আরবের ফুটবলে ভাটির টান শুরু হয় এরপর থেকেই। টানা তিনটি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের বৃত্তে বন্দি ছিল এশিয়ান দলটি। সবশেষ তিনটি টুর্নামেন্টে তো জায়গাই হয়নি তাদের। বাছাইপর্বেই থমকে গেছে সৌদির বিশ্বকাপ স্বপ্ন। অবশেষে গত বছর এক যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে তাদের। পুণরায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে তারা। এবার ফেরার আসরটা রাঙিয়ে তুলতে মরিয়া হয়েই মাঠে নামবে সৌদি আরব।

অবশ্য বিশ্বকাপে বরাবর ব্যর্থ সৌদির বড় সাফল্য আছে ফিফার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট কনফেডারেশনস কাপে। ১৯৯২ সালে প্রথম আসরেই রূপকথার জন্ম দিয়েছিল তারা। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ফাইনালে উঠেছিল সৌদি। ‘কিং ফাহদ কাপ’ নামক ওই টুর্নামেন্টে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেই কপাল পুড়ে তাদের। ঘরের মাঠে স্বপ্নের ট্রফিটা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে আসে তারা। রিয়াদের ফাইনালে ফর্মের তুঙ্গে থাকা আর্জেন্টিনার কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় সৌদি আরব।

এরপর আরো তিনবার কনফেডারেশনস কাপে অংশ নেয়া দলটি দুবারই বিদায় নিয়েছে গ্রুপপর্বে। ১৯৯৯ সালে নিজেদের সবশেষ কনফেডারেশনস কাপে অবশ্য গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল এশিয়ান দলটি। কিন্তু সেমিফাইনালের বেশি এগুতে পারেনি সৌদি আরব। ওই আসরে চতুর্থ সেরা দলের স্বীকৃতি পেয়েছিল তারা।

ফিফার প্রতিযোগিতায় শিরোপা অধরা থাকলেও এশিয়ার বিশ্বকাপে টানা দুবারসহ মোট তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। অবাক হওয়ার তথ্য হচ্ছে- ১৯৮৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচটি এশিয়ান কাপেই ফাইনাল খেলেছিল তারা। তবে এই টুর্নামেন্টে শেষবার তারা ফাইনাল খেলেছে ২০০৭ সালে। পরের দুই আসরে অংশ নিলেও গ্রুপপর্বেই থেমেছে তারা।

এই বাজে সময়ের মধ্যে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লজ্জাটা তারা পেয়েছিল ২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে। ইউরোপিয়ান পরাশক্তি জার্মানির কাছে গ্রুপপর্বে রীতিমতো ফুটবলপাঠ করতে হয়েছিল এশিয়ার দলটিকে। ওই বিশ্বকাপে জার্মান বুল্টেজারে ৮-০ গোলে চূর্ণ হয়েছিল সৌদি আরব। গ্রুপপর্বের পরের দুই ম্যাচে আবার ক্যামেরুন ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হার। সৌদি আরবের ফুটবলে চূড়ান্ত রাহুর দশাটা লেগেছিল মূলত সেখান থেকেই। পরের তিনটি বিশ্বকাপে তো বাছাইপর্বের গণ্ডিই পাড়ি দিতে পারেনি এশিয়ান দলটি।

অথচ জার্মান দুঃস্বপ্নটা প্রায় পেছনে ফেলে দিয়েছিল সৌদি আরব। নড়েচড়ে বসেছিলেন দেশটির ফুটবলকর্তারা। ঢেলে সাজায় জাতীয় দলকে। যেটার সুফল হিসেবে হিসেবে ২০০৪ সালে নিজেদের ইতিহাসের সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২১ নাম্বারে চলে এসেছিল সৌদি আরব। কিন্তু র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হলেও ওই সময়ে আর বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি তারা।

টালমাটাল সৌদি আরব এখন আছে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬৭ নাম্বারে। চার বছর আগে তো ১২৬ নাম্বারেও নেমে গিয়েছিল গ্রিন ফ্যালকনরা। পুরনো বিপর্যয়টা কাটিয়ে উঠতে সৌদি আরব নতুন করে শুরু করেছে। যেটার মূল সাফল্য রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট কাটাটা। টানা তিনটি বিশ্বকাপে দর্শক সারিতে থাকা গ্রিন ফ্যালকনরা ফেরার আসরে অবশ্য বড় স্বপ্ন দেখছে না। কারণটা অবশ্যই কঠিন বাস্তবতা। অবস্থা এমন যে, দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাটাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইয়ের ‘বি’ গ্রুপের সেরা দল হিসেবে মূলপর্ব নিশ্চিত করা সৌদির জন্য এবারের বিশ্বকাপটা কঠিনই হওয়ার কথা।

তবে আশারবানী শুনিয়েছেন সৌদি আরবের আর্জেন্টাইন কোচ হুয়ান অ্যান্তনিও পিজ্জি। বিখ্যাত এই কোচের অধীনেই পুণরায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের ফুটবল। দুই বছর আগে চিলিকে কোপা আমরিকা শিরোপা জেতানো আর্জেন্টাইন কোচ এবার বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করতে চান। এ যাত্রায় পিজ্জির প্রধান অস্ত্র মোহাম্মদ আল-সাহলাউই। তিন বছর আগে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই দলের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন ৩১ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার।

সৌদির জার্সিতে ৩৯ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন তিনি। দলের আক্রমণভাগে তার সঙ্গে আছেন স্প্যানিশ ক্লাব লেগানেসে ধারে খেলা ইয়াহিয়া আল-শেহরি। ক্লাব ফুটবলে দারুণ একটা মৌসুম শেষ করা এই উইঙ্গার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও করেছেন পাঁচ গোল। সৌদি আরব দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্নটা দেখছে মূলত এই মানিকজোড়ের ওপর ভর করেই। যদিও সৌদি আরবকে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা করবেন বত্রিশ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ওসামা হাওয়াসাই।

সৌদি আরব ফুটবলপ্রেমীদের জন্য দারুণ একটা সংবাদ আছে। ফেরার ম্যাচেই ইতিহাসের পাতায় উঠে যাবে তাদের নাম। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে সৌদি। ১৪ জুন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তারা স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হবে।

‘এ’ গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ মিসর ও উরুগুয়ে। স্বাগতিক রাশিয়া, মোহাম্মদ সালাহর মিসর এবং দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের মতো দলের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে যে তাদের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে সেটা এক প্রকার অনুমিতই। গ্রিন ফ্যালকনদের বড় পরীক্ষাটা তাই দিতে হচ্ছে বিশ্বকাপের

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.