ফুটবল দুনিয়া তাকে চিনতে পারতো আগের বিশ্বকাপেই। কিন্তু বয়সটা ছিল না অনুকূলে; তাই আসতে পারেননি কোচের বিবেচনায়। তার আবির্ভাব হলো '৮৬-এর বিশ্বকাপে। তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। কাঁপিয়ে দিলেন গোটা বিশ্বকে। ত্রয়োদশ বিশ্বকাপে তার করা দুই গোলই ফুটবল ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

maradona celebrates world cup trophy

ফুটবলপ্রেমীদের বুঝতে বাকি নেই কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথাই বলা হচ্ছে। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের নায়ক-খলনায়ক দুই চরিত্রেই দেখা গেছে তাকে। ম্যারাডোনার আগুন পারফরম্যান্সের সুবাদে দ্বিতীয়বারের মতো স্বপ্নের সোনালি ট্রফিটা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। পাশাপাশি তার গোলকে কেন্দ্র করেই দেখা দেয় তুমুল বিতর্ক।

নিঃসন্দেহে ফুটবল মহাযজ্ঞের ওই আসরের সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা। কিন্তু বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসরটা শুধু তার জন্যই নয়, আরো কিছু কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। কি ছিল না মেক্সিকো বিশ্বকাপে! ফুটবল শৈলী, বির্তক, অবিশ্বাস্য গোল, নাটকীয়তা, সংশয়- একটি আদর্শ টুর্নামেন্টের প্রায় সব উপাদান ছিল ১৩তম বিশ্বকাপে।

অথচ ওই বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়াবে কিনা সংশয় জেগেছিল তা নিয়েই। ওই আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ল্যাটিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায়। কিন্তু ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে অস্বীকৃতি জানায় কলম্বিয়ানরা। অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাগতিক না হওয়ার ঘোষণা দেয় ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে আয়োজক খুঁজতে সংকটে পড়ে গিয়েছিল ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা। পরে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো বাড়িয়ে দেয় হাত। রাজি হয় বিশ্বকাপ আয়োজন করতে। কিন্তু মেক্সিকানদের ইচ্ছা শক্তির সামনে আবার বাধা হয়ে হয়ে দাঁড়ায় বিরূপ প্রকৃতি। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তর আমেরিকার দেশটি। বিশ্বকাপটা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার শেষ ছিল না।

তবে আশার খবর ছিল- বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো বড় রকমের ক্ষতির শিকার হয়নি। কয়েকদিনের সংস্কারের পর ভেন্যুগুলো ম্যাচ আয়োজনের উপযোগী হয়ে ওঠে। শুরু হয় আলোচিত বিশ্বকাপ। যেখানে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে ইরাক, ডেনমার্ক ও কানাডা। ওই আসর দিয়েই বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন হয় উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, হাঙ্গেরি এবং পর্তুগালের মতো দেশগুলোর।

এই আসরে অংশ নেয় ২৪টি দল। দলগুলো হচ্ছে- মেক্সিকো (স্বাগতিক), ইতালি (চ্যাম্পিয়ন), কানাডা, ইরাক, মরক্কো, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পশ্চিম জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার '৮৬-এর বিশ্বকাপ শুরু হয় অঘটন দিয়ে। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই রূপকথার জন্ম দেয় ডেনমার্ক। গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচে ডেনিশরা হারিয়ে দেয় উরুগুয়ে, পশ্চিম জার্মানি ও স্কটল্যান্ডকে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ডেনমার্ক উঠে যায় নক আউট পর্বে। কিন্তু রাজসিক শুরু করা ডেনিশদের বিদায় নিতে হয় দ্বিতীয় রাউন্ডেই।

বিশ্বকাপের নায়ক বনে গেলেও গ্রুপপর্বে ম্যারাডোনা ছিলেন নিষ্প্রভ। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি জ্বলে ওঠেন নক আউট পর্ব থেকে। তার অ্যাসিস্ট করা গোলের ওপর দাঁড়িয়ে উরুগুয়েকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেয় আর্জেন্টিনা। দলের পরের ম্যাচেই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন ম্যারাডোনা।

কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ইংল্যান্ডকে। সেই মাচটাই বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ হয়ে থাকে। প্রথমার্ধের নিস্ফলা লড়াই শেষে বিরতি থেকে ফিরে পরপর দুই গোল করেন ম্যারাডোনা। দুটি গোলেরই আছে বিরাট ইতিহাস।

৫১ মিনিটে বহুল বিতর্কিত গোলটি করেন ম্যারাডোনা। হাতে দিয়ে ইংল্যান্ডের জালে বল জড়ান আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। কিন্তু গোলের মুহূর্তটা এড়িয়ে যায় রেফারির চোখ। ম্যাচ শেষে বিতর্কের ঝড় তোলে ওই গোলটা। যদিও পরবর্তীতে এটাকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে দাবি করেন ম্যারাডোনা। তার ওই গোলের বিতর্কটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে ফুটবল দুনিয়া।

ওই ম্যাচের ৫৫ মিনিটে ম্যারাডোনার দ্বিতীয় গোলটাও হয়ে থাকে ইতিহাস। ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডারদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে তিনি যে গোলটা করেছেন সেটার বিশেষণ এক কথায় অবিশ্বাস্য। মধ্য মাঠে বল পেয়ে একক প্রচেষ্টায় সেটার সুন্দর পরিণতি দেন ম্যারাডোনা। এই গোলটাই ‘শতাব্দীর সেরা’ গোল হয়ে আছে ফুটবলের বিশ্বে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল-ফ্রান্সের দ্বৈরথটাও ছড়িয়েছিল উত্তেজনার রেণু। কিন্তু টাইব্রেকারে সেলেকাওদের ৪-৩ গোলে হারিয়ে শেষ চারে উঠে যায় ফরাসিরা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নের সমাধী হয়ে ফ্রান্সের। ২-০ গোলে হেরে যায় ছবি ও কবিতার দেশটি। একই ব্যবধানে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে আর্জেন্টাইনদের পক্ষে দুটো গোলই করেন ম্যারাডোনা।

অথচ আগের দুই ম্যাচে চার গোল করা ম্যারাডোনা গোল পাননি মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। তবু ফাইনালে ৫৫ মিনিটের মধ্যে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৭৪ ও ৮০ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে গোল দুটি ফিরিয়ে দেয় পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি।

তিন মিনিট পরই তৃতীয় গোলটি করে বসে আর্জেন্টিনা। এবার আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি জার্মানরা। ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকে যায় জার্মানির। আর তাতেই দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। আসরজুড়ে দ্যুতি ছড়ানোর পুরস্কার হিসেবে অবধারিতভাবেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান ম্যারাডোনা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.