দল পর্যালোচনা: মিশরের স্বপ্ন সারথি সালাহ

ভৌগলিক কারণেই বিখ্যাত মিশর। নীলনদ আর পিরামিডের দেশটি সাম্প্রতিক বছরে আলোচনায় উঠে এসেছে ফুটবলের কারণে। বহু বছর পর মিশরকে লাইমলাইটে নিয়ে এসেছেন যিনি, তিনি মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুল ফরওয়ার্ডের আগুনঝরা পারফরম্যান্সের সুবাদেই ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পেয়েছে মিশর। আসন্ন রাশিয়ার ফুটবল মহাযজ্ঞে তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে দেশটি।

কয়েক শ বছর আগেও ফারাওয়ের দেশ বলে পরিচিতি ছিল মিশরের। ফারাও শাসন এখন নেই দেশটিতে। নেই ফারাও-ও। কিন্তু তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছাপটা ঠিকই রয়ে গেছে। নতুন করে উত্থান হলো আরেক ফারাওয়ের। তিনি অবশ্য মাঠের শাসক- নাম সালাহ। একটি জরিপে এই ফুটবলারের জনপ্রিয়তা হার মানিয়েছিল খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ সিসিরও!

যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখছে মিশর সেই সালাহর ওপর দিয়ে আচমকা একটা ঝড় বয়ে গেল। বিশ্বকাপকে আসন্ন রেখে চোটে পড়েন লিভারপুল প্রাণভোমরা। গেল মাসে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক ডিফেন্ডার সার্জিও রামোসের মারাত্মক ট্যাকলের শিকার হন সালাহ। এই চোট তাকে ছিটকে দিয়েছে মাঠের বাইরে। তার ইংলিশ ফুটবলের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপে খেলা নিয়েও তো শুরুতে সংশয় জেগেছিল। যদিও আশারবানী শুনিয়েছে মিশর। জানিয়েছে বিশ্বকাপ খেলবেন সালাহ।

ভক্তদের জন্য স্বস্তির খবর ধীরে ধীরে ফিট হয়ে উঠছেন সালাহ। দলের সঙ্গে রাশিয়ায় পৌঁছে নিয়মিত অনুশীলনও করছেন তিনি। সালাহর বিশ্বাস প্রথম ম্যাচ থেকেই খেলতে পারবেন। তবে সালাহর জন্য এটা প্রথম হলেও মিশরের জন্য রাশিয়ার মঞ্চটা হয়ে উঠবে তৃতীয় বিশ্বকাপ।

অবশ্য বিশ্বকাপের ইতিহাসে অনেক পুরনো দল মিশর। বিশ্বমঞ্চের দ্বিতীয় আসরেই অভিষেক হয় তাদের। ১৯৩৪ সালে শুরুতেই তারা চমকে দিয়েছিল সবাইকে। পরাশক্তি হাঙ্গেরিকে মিশর উড়িয়ে দেয় ৪-২ গোলে। কিন্তু শুরুটা যতটা বর্নিল হলো, মিশরের শেষটা হলো ততটা বিবর্ণ। বিদায় নিতে হয় গ্রুপপর্বেই। সেখান থেকেই চূড়ান্ত অবনতি হয় মিশরের ফুটবলে। টানা ১১টি বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি আফ্রিকার দেশটি।

দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলার জন্য মিশরকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। কাকতালীয়ভাবে সেই ইতালির মঞ্চেই প্রত্যাবর্তন ঘটে তাদের। কিন্তু ফেরার উপলক্ষটা রাঙাতে পারেনি তারা। শুরুতে নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ডকে রুখে দিয়ে কিছুটা অবশ্য আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় মিশর।

বিশ্বকাপে সফল না হলেও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় সোনালি স্মৃতি আছে মিশরের। আফ্রিকান নেশনস কাপে সাতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মিশরীয়রা। যদিও তাদের শেষ ট্রফিটা এসেছিল আট বছর আগে। এ ছাড়া ফিফার অন্য টুর্নামেন্ট কনফেডাশেনস কাপে দুবার অংশ নিলেও গ্রুপপর্বেই থেমে গেছে তাদের স্বপ্নযাত্রা।

কিন্তু ফিফার টুর্নামেন্টের এই গ্রুপপর্বের বৃত্তটা ভাঙার স্বপ্ন দেখছে মিশর। আফ্রিকান দেশটিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সালাহ। মিশর কোচ হেক্টর কুপার রণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন লিভারপুল এই ফরওয়ার্ডকে ঘিরেই। মাঠে কাজটা করেছেন সালাহ। কিন্তু এর বাইরে আফ্রিকান দলটিকে বদলে দেওয়ার নেপথ্য নায়ক আর্জেন্টাইন এই কোচই। তিন বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পরই মিশরকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দেন কুপার।

চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই ফাইনালটা বাদ দিলে গত মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে সালাহর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড ৩২ গোল করে তিনি জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট। দাপুটে পারফরম্যান্সে ১১ বছর পর লিভারপুলকে তুলেছেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের ফাইনালে। এবার মিশরকে অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলতে পারলে এ বছরের ব্যালন ডি’অরের দাদিবার হয়ে উঠতে পারেন সালাহ।

সালাহর স্বপ্নের বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন তার অধিনায়ক এসাম আল হাদারি। মিশরের গোল পোস্টের নিচে ৪৫ বছর পাঁচ মাস বয়সী এই তারকাই ভরসা। তিনি এই আসর তো বটে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী ফুটবলার হিসেবে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। আল হাদারি আসন্ন রাশিয়ার টুর্নামেন্টে মিসরকেও নেতৃত্ব দেবেন।

আগামী ১৪ জুন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে রাশিয়া ও সৌদি আরব। তবে মিশরের জন্য আসরটা শুরু হবে পরদিন। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কাছে প্রথম ম্যাচেই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে মিশরকে। ‘এ’ গ্রুপের অন্য দুই ম্যাচে আফ্রিকান দেশটির প্রতিপক্ষ স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরব।