আপনি পড়ছেন

সেই ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ থেকে শুরু হয়ে এখনো রক্ত ঝরছে কাশ্মিরের মুসলিমদের। এর পেছনে রয়েছে প্রতারণা ও রক্তাক্ত এক ইতিহাস। রাজা হরি সিংয়ের প্রতারণা আর ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের সহযোগিতায় রক্তাক্ত সেনা অভিযানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের কাশ্মির দখল করে নেয় ভারত।

how india occupied kashmir

এরপর কাশ্মিরকে মুক্ত করতে ভারতের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তার কারণে তারা সফল হয়নি। তবে এখনো স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার ফিলিস্তিন’ খ্যাত কাশ্মিরের প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

দেশ ভাগের সময় ব্রিটিশ লর্ড মাউন্টব্যাটেন ৬৬৫টি দেশীয় রাজ্যকে উপদেশ দিয়েছিলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে তারা যেন হিন্দুস্থান বা পাকিস্তান কোনো একটি ডোমিনিয়নে যোগ দেয়। যোগ দেয়ার ব্যাপারে শাসনকর্তা জনগণের মনোভাব, উভয় ডোমিনিয়নের সঙ্গে তাদের আঞ্চলিক নৈকট্য ইত্যাদির দিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

তদানুসারে হায়দ্রাবাদ, জুনাগড়, মান্ডেভার ও কাশ্মির ব্যতীত সকল রাজ্যই কোনো না কোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিয়েছিল। হায়দ্রাবাদ বেশ বড় একটি হিন্দু প্রধান রাজ্য যার শাসক ছিল নিজাম একজন মুসলমান নৃপতি। তিনি জনসংখ্যা বিবেচনায় ভারতে যোগ দেন।

অবশ্য জুনাগড় ও মান্ডেভার ছিল দু’টি হিন্দু প্রধান দেশীয় রাজ্য যার অধিপতি ছিল মুসলমান নওয়াব। এ দু’টি রাজ্যের শাসনকর্তারা পাকিস্তানে যোগ দিলেও যেহেতু প্রজারা ছিল অধিকাংশ হিন্দু তাই ভারত দু’টি রাজ্যই সৈন্য পাঠিয়ে দখল করে নিল।

পাকিস্তান সদ্য গঠিত রাষ্ট্র যার সৈন্যবাহিনী ছিল তখনো অসংগঠিত দুর্বল। তাই জুনাগড় ও মান্ডেভার হিন্দুস্থান দখল করে নিলেও প্রতিবাদ করা ছাড়া পাকিস্তান আর কিছু করতে পারল না।

কাশ্মিরের জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মুসলমান। কিন্তু রাজা ছিল হিন্দু। জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলমান এবং পাকিস্তানের সংলগ্ন রাজ্য এই কারণে কায়েদে আযম জিন্নাহ আশা করেছিলেন যে, কাশ্মির শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে যোগ দিবে।

কিন্তু কাশ্মিরের রাজা হরি সিং যেমন ছিল বিলাসী, লম্পট ও অর্থশালী তেমনি ছিল নীতিহীন, নিষ্ঠুর ও ধূর্ত। হিন্দুস্থান-পাকিস্তান কোথাও যোগ না দিয়ে কাশ্মিরের উপর তার আধিপত্য কোনভাবে বজায় রাখা যায় কিনা রাজা হরি সিং সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছিলেন।

মাউন্টব্যাটের তাকে ভারতে যোগ দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু রাজা নানাভাবে সেই চাপ এড়িয়ে যাচ্ছিল। জিন্নাহ সাহেবও গোপনে দূত পাঠিয়ে তাকে পাকিস্তানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিন্তু রাজা সে আমন্ত্রণে তেমন সাড়া দেয়নি।

এই অবস্থায় আগস্টের শেষ দিকে কাশ্মিরের উত্তরাঞ্চলের পুঞ্চ এলাকার মুসলমান অধিবাসীরা হঠাৎ করে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করল। এই এলাকাটি পাকিস্তানের অত্যন্ত সংলগ্ন। রাজা হরি সিং বিদ্রোহ দমনের জন্য সৈন্য পাঠালেন এবং জম্মু এলাকার সকল মুসলমানকে বিতাড়িত করার আদেশ দিলেন তার সৈন্যদলকে। মুসলমানদের উপর নেমে এল অমানুষিক নির্যাতন।

অক্টোবরের ২৪ তারিখে জিন্নাহর কাছে খবর এলো উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার পাঠান গেরিলা তাদের মুসলমান ভাইদের রক্ষার জন্য কাশ্মিরে ঢুকে পড়েছে এবং তারা শ্রীনগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

গেরিলা আক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ভারতের সৈন্যবাহিনীর সাহায্য প্রার্থনা করল এবং ভারত সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মিরে বিমানযোগে সৈন্য পাঠাতে আরম্ভ করল।

কাশ্মির মুসলমান প্রধান রাজ্য হলেও সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, শাসন ব্যবস্থা সবকিছুই ছিল হিন্দুদের হাতে। মুসলমানরা ছিল গরীব, অশিক্ষিত; চাষাবাদ ও ফলমূল বিক্রি করেই তারা প্রধানত জীবিকা নির্বাহ করত। দেশের প্রকৃত ক্ষমতা ছিল কাশ্মিরি ব্রাহ্মণদের হাতে। তারাই বলতে গেলে দেশ শাসন করত।

পণ্ডিত জওহর লাল ও তার বাবা মতিলাল নেহেরু ছিলেন এই কাশ্মিরি ব্রাহ্মণদেরই বংশধর। তাই কাশ্মিরের প্রতি ছিল জওহর লালের সুগভীর নাড়ীর টান। যেভাবে হোক কাশ্মিরকে ভারতভুক্ত করার জন্য প্রথম থেকে মাউন্টব্যাটেনের সহযোগিতা পেতে তিনি তাই সচেষ্ট ছিলেন।

জিন্নাহ যখন কাশ্মিরের মুসলমানদের উপর অত্যাচারের কাহিনী শুনতে পেলেন তখন তিনি খুবই বিচলিত বোধ করলেন। তাই তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তিনি উপায় খুঁজতে লাগলেন।

এরপর যখন তিনি জানতে পারলেন ভারত সৈন্য পাঠিয়ে কাশ্মির দখল করে নিচ্ছে তখন ভারতীয়দের ঠেকাবার জন্য তিনি সৈন্য পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু হিন্দুস্থান-পাকিস্তান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ফিল্ড মার্শাল স্যার ক্লড অচিলনেক বাধা দিলেন।

তিনি যুক্তি দেখালেন মহারাজা ভারতে যোগদান করেছে এই কারণে ভারতের কাশ্মিরে সৈন্য প্রেরণ আইনতঃ সিদ্ধ হয়েছে। তিনি কায়েদে আযমকে ভয় দেখালেন যে, কাশ্মিরে সৈন্য প্রেরণ করতে পীড়াপীড়ি করা হলে তিনি পাকিস্তান থেকে সমস্ত বৃটিশ কর্মচারীকে অপসারনের নির্দেশ দিবেন। স্যার অচিলনেকের এই সিদ্ধান্তে জিন্নাহ অত্যন্ত মর্মাহত হলেন।

এভাবেই কাশ্মিরের অর্ধেক দখল করে নেয় ভারত। তারা এর নাম দেয় জম্মু-কাশ্মির। এরপর থেকে কাশ্মির নিয়ে ভারতের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে লড়ে পাকিস্তান। নিজেদের মাতৃভূমি স্বাধীন করতে লড়ে যাচ্ছেন সেখানকার যোদ্ধারা। তাদের পাশে আছে কাশ্মিরি জনগণ।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.