কারাগারগুলোয় বন্দিসংখ্যা ধারণ ক্ষমতার ৩০০ শতাংশ বেশি
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
সারা দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি বন্দি রয়েছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক হারে মানুষ গ্রেপ্তারে কারণে কারাগারে বন্দিরা চরম দুর্দশায় পড়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বন্দির স্থান সংকুলান দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন, বিশেষ করে সীমান্ত জেলাগুলোতে, সেখানে ধারণ ক্ষমতার ৪০০ থেকে ৫০০ শতাংশ বেশি বন্দি রয়েছে।
কারাগারগুলোতে বন্দিদের মানবাধিকার ও আইনি অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হক এবং বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান।
তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিৎ নয়। আদালতের দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা উচিৎ এবং জামিনযোগ্য ক্ষেত্রে অবিলম্বে বিচারকদের জামিন মঞ্জুর করা উচিৎ। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই মানুষকে অকারণে কারাগারে রাখার কোন কারণ নেই।
কারা সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে মোট ৩৬,৬১৪ বন্দির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত এসব কারাগারে ৭০ হাজার বন্দি থাকে। তবে ২৪ জুন পর্যন্ত কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৮৩,৩৫০ হয়। বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ মাদক মামলায় কারাগারে রয়েছে।
মোট বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৩৫,৮১৫ জনকে মাদক মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৮৯ জন নারীসহ ৫,২১৮ বন্দীকে মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অন্যদিকে প্রায় ১৯ হাজার বন্দির মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
গত ৫ মে থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করলে বন্দিদের সংখ্যা অকস্মাৎ বাড়তে থাকে। পরে ১৮ মে থেকে পুলিশ দেশব্যাপী বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করতে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের গ্রেপ্তারের ঘটনা আরো ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
পুলিশ সদরদপ্তরের সূত্রমতে, গত ১৮ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত প্রায় ৩০,৪৮৯ সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ৩ জুন পর্যন্ত ২০ লাখ পিস ইয়াবা, ৩,১১৭ কেজি গাঁজা, ২৩,৪৯৫ বোতল ফেনসিডিল, ২০টি পিস্তল ও পাঁচটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ ও র্যাবের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বিপুল সংখ্যক সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
এ বিষয়ে কারা সদর দপ্তরের সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল (অ্যাডমিন) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। সাধারণত কারাগারগুলোতে তাদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দি থাকে, কিন্তু বর্তমানে তাদের ধারণ ক্ষমতার ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বন্দি রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কারাগারে প্রায় ৮৮ হাজার বন্দি ছিল, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বন্দির সংখ্যা। ঈদ-উল-ফিতরের আগে কয়েক হাজার বন্দিকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।’
এমনকি কয়েকটি কারাগারে বন্দিদের সংখ্যা তাদের ধারণ ক্ষমতা থেকে চারগুণ থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। কারা কর্তৃপক্ষকে বন্দিদের স্থান সংকুলানের জন্য অন্য জেলার কারাগারে স্থানান্তর করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকায় কারা কর্তৃপক্ষকে বন্দিদের স্থান সংকুলান দিতে তাদের গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবারো আটক বা হত্যা করতে পারে এই আতংকে মাদক মামলায় আটক অনেক বন্দি এখন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে চান না।
এ বিষয়ে এনএইচআরসি চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হক জানান, অধিক জনাকীর্ণ কারাগারগুলোকে বন্দিদের মানবাধিকার দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তার মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গ্রেপ্তার সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ। যদি আমরা নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলোর মূল্যায়ন করি, তবে ৭০ শতাংশের বেশি অভিযুক্তকে নির্দোষ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে কারাদণ্ড ভোগ করছেন। সুতরাং নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিৎ নয়।
মামলার নিষ্পত্তি দীর্ঘায়িত করা বা মামলা ফেলে রাখা কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে মনে করেন তিনি।
এনএইচআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিচারকদের অভিযুক্তদের জামিনে মুক্ত করার বিষয়ে উদার হতে হবে। যাদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বা মামলাগুলোকে প্রভাবিত করার কোনো সম্ভাবনা নেই তাদের জামিন দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
মানবাধিকার সহায়তা সমিতির উপদেষ্টা নূর খান বলেন, বন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সুবিধাসহ সংশোধন কেন্দ্র পরিণত করা উচিৎ। আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিৎ নয় এবং সকল ক্ষেত্রে মামলাগুলোর দ্রুত বিচারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।
এম জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.