আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা: ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনের ডাক

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের সঙ্গে আলাপকালে এ খবর জানিয়েছেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো অবরুদ্ধ আছি। আমাকে বেদম মারধর করা হয়েছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি।’

ঠিক কতজন আহত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ হিসেব এখনো জানতে পারিনি। ওরা যাকে পেয়েছে তার ওপরেই হামলা করেছে। নুরের (যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর) অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হল- সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জন ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ।’

যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের গলা টিপে ধরার জন্য হাত বাড়াচ্ছেন একজন, আরো কয়েকজন মিলে কিলঘুষি ও টানা-হেচড়া করছেন

একই ঘোষণা দিয়ে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর যে হামলা ছাত্রলীগ চালিয়েছে তা ন্যাক্কারজনক। এ হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছি।’

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ৩০ জুন, শনিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিল আন্দোলনকারীদের। পরিষদের নেতা-কর্মীরা বেলা পৌনে ১১দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হলে ‘শিবির ধর, শিবির ধর’ বলে তাদের ওপর আতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

তবে ছাত্রলীগ এ হামলায় দায় অস্বীকার করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের কাছে দাবি করেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে। পূর্বে যারা শাহবাগে পুলিশের টিয়ারশেল, রাবারবুলেট খেয়েছে তাদের সাথে আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশের সংঘর্ষ হয়েছে।’

অন্য দিকে হামলার ঘটনার পর কেন্দ্রী কমিটির বিরোধীতা করে সৈকত নামে একজন গ্রন্থাগারের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি পরিষদের নেতাদের ও তাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে হামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র এখানে আসলাম। হামলার সঙ্গে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।’

গ্রন্থাগারের পাশে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে একজনকে মারধর করা হচ্ছে

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলায় বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। বেশ কিছু ভিডিও চিত্রেও ছাত্রলীগ নেতাদের মারমুখী ভূমিকায় দেখা গেছে। হামলার ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বিভিন্ন স্তরের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একই বর্তা ভাইরাল করার চেষ্টা করেছেন। তাদের ওই বার্তায় দাবি করা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে কোটা আন্দোলনকারীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ!’

গত এপ্রিল মাসে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনকারীরা বলে আসছেন, তারা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়েছেন, বাতিল নয়। তবুও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে তারা স্বাগত জানিয়ে তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করার দাবি জানান।

সরকারের সেই ঘোষণার আড়াই মাসেও কোটা সংস্কারের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করতে আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তাদের এই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দিয়ে আসছিল।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ এ হামলার ঘটনা ঘটল। হামলার সময় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত ফেসবুক গ্রুপে লাইভে ছিলেন। লাইভে দেখা যায়, বেশ কিছু আন্দোলনকারী গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। এ সময় তাদের ওপর আতর্কিত হামলা চালালে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। রাশেদ খান অভিযোগ করেছেন, ‘তাদের ওপর পিস্তল-রামদা নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।’

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে লাঠি-সোটা, রামদা ও পিস্তল নিয়ে এ হামলা করা হয়েছে। হামলায় রাশেদ খান ও নুর হোসেন নূরসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী ও চাকরি প্রত্যাশীরা গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার ঘটনার পর থেকেই গোটা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়ায় আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। পরিষদের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এমন সশস্ত্র হামলার পর তারা এখন বাইরে বের হতে অনিরাপদবোধ করছেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন এক সময় এ হামলার ঘটনা ঘটল যার একদিন পরেই এই বিদ্যাপীঠ পা রাখবে প্রতিষ্ঠার ৯৮তম বার্ষিকীতে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই হামলাকে নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।