বিশ্বকাপ জিততে এসে শেষ ষোলোতেই শেষ হলো আর্জেন্টিনার লড়াই। চোখের জলে রাশিয়া থেকে বিদায় নিলেন লিওনেল মেসি, বিদায় নিলো আর্জেন্টিনা। শেষ ষোলোর ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপ্পে, অ্যান্টোনি গ্রিজম্যানদের ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনা হেরে গেলো ৪-৩ গোলের বিশাল ব্যবধানে।

argentina out of world cup after lossing to argentina

কাজান এরেনায় প্রথমার্ধ শেষ হয় দুই দলের সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মেসির শটে আলতো করে পা ছুঁইয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন গ্যাব্রিয়েল মার্সেডো। কিন্তু সেখানেই শেষ আর্জেন্টিনার গল্প। এরপর একের পর এক গোল হজম করে শেষ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ। শেষ হয়ে যায় লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন। একই সাথে আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির অধ্যায়ও শেষ হয়ে গেলো?

প্রথমার্ধে সমতায় থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৪৮ মিনিটে বেনেগার থেকে পাওয়া ক্রস রিসিভ করে ফ্রান্সের গোলমুখে শট করেন মেসি। তাতে দারুণ কৌশলে পা ছুঁইয়ে দেন ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল মার্সেডো। কেঁপে উঠে ফ্রান্সের জাল। এবারও গোলের পর একটা হলুদ কার্ড দেখে আর্জেন্টিনা। রেফারির আক্রমণাত্মক রেফারিংয়ের শিকার হন এভার বেনেগা। এর আগে আরো দুটি হলুদ কার্ড দেখে আর্জেন্টিনা।

মাশ্চেরানো ও বেনেগা, দুই ম্যাচে দেখলেন দুই হলুদ কার্ড। যার ফলে আর্জেন্টিনা পরের রাউন্ডে গেলে এ দুজন খেলতে পারতেন না। কে জানে, হঠাৎ করে এই চিন্তাটাই যেনো অস্থির করে দেয় আর্জেন্টিনাকে। ফল— গোলের পর গোল হজম করতে থাকে তারা। ৫৭ থেকে ৬৪ মিনিটে টানা তিনটি গোল হজম করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচ থেকেও তারা ছিটকে যায় তখনই।

৫৭ মিনিটে বেনজামিন পাভার্ড দলের দ্বিতীয় গোল করে সমতায় ফেরান ফ্রান্সকে। ঠিক আগের মিনিটেই আর্জেন্টিনার ডিফেন্স এলোমেলো করে দিয়েই সফলতা পায়নি ফ্রান্স। কিন্তু এবার আর ভুল করেননি পাভার্ড। লুকাস হার্নান্দেজের সহায়তায় গোল করেন পাভার্ড। ১৯৯৮ সালের পর পাভার্ডই প্রথম ফরাসি ডিফেন্ডার, যে বিশ্বকাপে গোল করলেন। ১৯৯৮ সালে করেছিলেন লিলিয়ান থুরাম। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই গোল করেছিলেন তিনি।

সমতা থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতেই আর্জেন্টিনা তৃতীয় গোল হজম করে। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার জাল কাঁপান কিলিয়ান এমবাপ্পে। ম্যাচের শুরু থেকেই ক্ষুধার্থ থাকা ফরাসি তারকা এগিয়ে দেন ফ্রান্সকে। চার মিনিট পর আরো এক গোল করেন এমবাপ্পে। ৪-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচ থেকে তখন আক্ষরিক অর্থেই ছিটকে পড়ে আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে গিয়ে একটা গোল করে আর্জেন্টিনার হারের ব্যবধানটাই একটু কমান আগুয়েরো।

এর আগে, ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েন মেসিরা। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ডি বক্সে অহেতুক ফাউল করে ফেলেন মার্কোস রোহো। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে জেতানো এই তারকা শেষ ষোলোর প্রথমেই বিপদে ফেলেন দলকে। হলুদ কার্ডও হজম করতে হয় তাকে। পেনাল্টি থেকে পাওয়া সুযোগ একদমই মিস করেনি ফ্রান্স। ফ্রাঙ্ক আরমানিকে পরাস্ত করে গোল দিয়ে দেন অ্যান্টোনি গ্রিজম্যান।

শুরুর দিকের এই ধাক্কা যেনো আর্জেন্টিনাকে কিছুটা বেসামাল করে দেয়। এ সময় ডি মারিয়াকে বেশ কয়েকবার দেখা যায়, বল পেয়ে ব্যাক পাস দিতে। যেনো ভয়েই কাতর হয়ে পড়েন আর্জেন্টিনার বহু যুদ্ধ জয়ের এই নায়ক। প্রথমে পাওয়া গোল এবং প্রতিপক্ষের কিছুটা বেসামাল অবস্থা; এই দুই মিলে ফ্রান্স জ্বলে উঠে দারুণভাবে। এমবাপ্পেকে মনে হতে থাকে দারুণ ক্ষুধার্ত।

প্রথমার্ধের আধা ঘণ্টায় আর্জেন্টিনার প্রধান ভরসা মেসিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তাকে আক্রমণের মাঝামাঝি আশা করা হলেও, ম্যাচের প্রথম আধা ঘণ্টায় তাকে দেখা গেছে ডান দিকে। হোর্হে সাম্পাওলি মেসির আক্রমণের যে পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিলেন, প্রথম আধা ঘণ্টার তার দেখাই মিলেনি। প্রথমার্ধে মেসি এমন জায়গায় খেলছিলেন, যেখানে সাধারণত বার্সেলোনায় খেলেন তিনি। কিন্তু সেখানে বলের জোগান দেয়ার জন্য সার্জিও বুসকেট, জাভি ও ইনিয়েস্তাদের পান তিনি, কিন্তু আর্জেন্টিনার ওই জায়গাটা প্রায় শূন্য। এভার বানেগা বা জাভিয়ের মাশ্চেরানো সেভাবে মেসিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। মেসির এই অবস্থান, ফুটবলীয় পরিভাষায় যাকে বলে ‘ফলস নাইন’ সেখানে, মেসি খুব একটা কাজে লাগেননি।

ম্যাচের ৩৭ মিনিটে গিয়ে ডি মারিয়ার কাছ থেকে একটা বল পান মেসি। এগিয়ে যান ফ্রান্সের গোলবারের দিকে। কিন্তু ফরাসিদের রক্ষণ কৌশলে পরাস্ত হন তিনি। মেসির তুলনায় গ্রিজম্যান ও এমবাপ্পে ছিলেন অসাধারণ। প্রথমার্ধের বেশির ভাগ সময় আর্জেন্টিনার কাছে বল থাকলেও, এগিয়ে ছিলো ফ্রান্সই। গ্রিজম্যান ও এমবাপ্পের মধ্যে যে আগ্রাসী ফুটবল দেখা গেছে, তার অভাব ছিলো মেসি ও পাভনদের খেলায়।

প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার ১০-১৫ মিনিট আগেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাম্পাওলি এই ম্যাচটা যে পরিকল্পনায় খেলছেন, তা আর্জেন্টিনার জন্য মোটেও আদর্শ নয়। কিন্তু তারপরও হিগুইয়েন, আগুয়েরো বা দিবালাকে নামানোর কোনো তৎপরতা তিনি দেখাননি।

হোর্হে কেনো তার পরিকল্পনায় অটল ছিলেন, তা প্রমাণ করতেই যেনো মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে থাকেন ডি মারিয়া- মেসিরা। এর পুরস্কার মিলে ম্যাচের ৪১ মিনিটে গিয়ে। যখন ৩৫ গজ দূর থেকে নেয়া শটে ফ্রান্সের জাল কাঁপান তিনি। তার বিশেষ এই গোল ম্যাচে ফেরায় আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু এই আনন্দে কিছুটা বেদনার ছোপ পড়ে মাশ্চেরানো হলুদ কার্ড দেখায়। ম্যাচে এটি আর্জেন্টিনার তৃতীয় হলুদ কার্ড। তিন হলুদ কার্ড যদি আর্জেন্টিনার দুশ্চিন্তার কারণ হয়, তবে প্রথমার্ধে তাদের গর্বের ছিলো বল পজেশন। প্রথমার্ধে ৬৪ শতাংশ বল ছিলো হোর্হে সাম্পাওলির দলের দখলে। ম্যাচ শেষে এই এগিয়ে থাকা অবশ্য কোনোই কাজে লাগেনি আর্জেন্টিনার।

এটি আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ১২তম ম্যাচ। আগের ১১ ম্যাচের ছয়টিই জিতেছে আর্জেন্টিনা। বাকি পাঁচ ম্যাচের তিনটি আবার ড্র। বাকি দুইটিতে হার। অর্থাৎ ফরাসিদের বিপক্ষে দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক ইতিহাস সঙ্গী করে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা।

আরো একটা দারুণ ইতিহাস ছিলো মেসিদের সঙ্গে। সেটা হলো, কেবল মাত্র ২০০২ সাল বাদে, গত চার বিশ্বকাপের প্রত্যেকটিতে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে তারা। সে হিসেবে এবারও সেই সাফল্য ধরে রাখার অনুপ্রেরণা ছিলো মেসিদের।

গ্রুপ পর্বে দুই জয় ও এক ড্র নিয়ে শেষ ষোলোতে উঠে ফ্রান্স। অন্য দিকে আর্জেন্টিনাকে উঠতে হয় নানা চড়াউ-উৎড়াই পেরিয়ে। প্রথম ম্যাচেই তারা ড্র করে আইসল্যান্ডের সাথে। পরের ম্যাচে হেরে যায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জ্বলে উঠেন মেসি। গোল করেন মার্কোস রোহোও। এ দুজনের দেয়া দুই গোলে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বের কষ্টজর্জর সেই ইতিহাস আর ফেরাতে পারেননি মেসিরা। শেষ ষোলোতেই শেষ হয়ে গেলো মেসিদের বিশ্বকাপ।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.