অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের দিন

নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশ কম লজ্জায় পড়েনি। ঘরোয়া ক্রিকেটের দুরাবস্থা, খেলোয়াড়দের অনভিজ্ঞতার কারণে ভালোই ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার চাপে পড়ে বাংলাদেশে ভেঙে পড়ার গল্পও কম নয়। তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য লড়াই করতে ভুলেননি সাকিব আল হাসানরা। কিন্তু বুধবার বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে অ্যান্টিগায় যা হলো, তা বোধহয় সাকিব-মুশফিকদের দূর কল্পনায়ও ছিলো না। অ্যান্টিগায় তারা দেখলেন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের একটা দিন।

এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার আগেই আন্দাজ করা হয়েছিলো যে, তাদের পেসারদের দাপটে সাকিবদের ভুগতে হতে পারে। কিন্তু সেই ভোগান্তি যে বাংলাদেশকে ৪৩ রানে অলআউট করে দিবে, এতোটা মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজও আশা করেনি।

অ্যান্টিগায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় ১০ রানে। তামিম ইকবাল কেমার রোচের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। শুরুর ওই ধাক্কাটা নিশ্চিতভাবেই হতাশ করে রাত জেগে খেলা দেখতে বসা দর্শকদের। দর্শকরা ভুলেও ভাবেননি তার চেয়েও ভয়ঙ্কর হতাশা অপেক্ষা করছিলো তাদের জন্য।

১০ রানে এক উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রায় চোখের পলকেই ১৮ রানে হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট! পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে এই পাঁচ উইকেট তুলে নেন কেমার রোচ। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে খেলা পাঁচ টেস্টে রোচের শিকার ছিলো ২৫টি। এবার সেই শিকারসংখ্যা পৌঁছে গেলো ৩০-এ।

রোচ এক ওভারেই তুলে নেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। এ তিনজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশ এর চেয়ে বাজে কোনো ওভারের মুখে পড়েছে কিনা, অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনে তা রীতিমত গবেষণার বিষয়ই হয়ে ছিলো।

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে রোচের ধাক্কা এতোটাই প্রবল ছিলো যে, প্রথম পাঁচজনের বিদায়ের পর কেউ যে একটু সোজা হয়ে দাঁড়াবেন, তাও পারেননি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান। ৪৩ রানের মধ্যে বাকি পাঁচ উইকেট তুলে নেন মিগুয়েল কামিন্স ও জ্যাসন হোল্ডার।

১৯৪৬ সালের পর টেস্টের প্রথম ইনিংসে এর চেয়ে বড় কোনো বিপর্যয়ের ইতিহাস নেই। প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে এর চেয়ে কম রানের নজির আছে মাত্র দুটি। ১৯৩২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা মেলবোর্নে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছিলো ৩২ রান। যা এখনো প্রথম ইনিংসের সবচেয়ে করুণ ব্যর্থতা হিসেবে টিকে আছে। এরপর ১৯৪৬ সালে ঘরের মাঠ ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের ৪২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার ইতিহাসও আছে। বাংলাদেশের এই ৪৩ রান ১৯৭৪ সালে ভারতের ৪২ রানে অলআউট হওয়ার পর সবচেয়ে কম রানের রেকর্ডও।

অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের এমন গুঁড়িয়ে যাওয়া দেখে মনে হয়েছিলো, সেখানে বোধহয় নিখাদ বোলিং উইকেট বানিয়ে রেখেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু এই মনে হওয়াটা পুরোপুরি বিভ্রমে পরিণত হয় উইন্ডিজ ব্যাটিংয়ে নামার পর।

প্রথম দিন ৬৮ ওভার ব্যাটিং করে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করেছে স্বাগতিকরা। ওপেনিং জুটিতেই ১১৩ রান তুলেন ক্রেইগ ব্রাফেট ও ডেভন স্মিথ। বাংলাদেশের বোলিং লাইন প্রথম দিন ক্যারিবীয়দের কাছে কোনো পাত্তাই পায়নি।

বাংলাদেশের হয়ে প্রথম উইকেটটা তুলে নেন অভিষিক্ত পেসার আবু জায়েদ রাহী। পরের উইকেটটি পান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলের সেরা দুই বোলার সাকিব আল হাসান ও রুবেল হোসেন তেমন কোনো প্রভাব ছড়াতে পারেননি। কামরুল ইসলাম রাব্বি ও মেহেদি হাসান মিরাজও ছিলেন নিষ্প্রভ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা শুরু হলো দুঃস্বপ্ন দিয়েই।