‘জঙ্গি বলিনি, বলেছি কার্যক্রম জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে যায়’

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলেননি বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। আজ ১০ জুলাই, মঙ্গলবার দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আমি কোটা আন্দোলনকারীদের জঙ্গি বলিনি। আমি বলেছি শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম উগ্রপন্থী জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে যায়। এর মানে এই নয় যে, আমি শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলেছি। পত্রপত্রিকায় যেভাবে বক্তব্য এসেছে তার জন্য আমি দুঃখিত।’

এর আগে গত ৮ জুলাই তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমাকে কয়েকজন সহকর্মী একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও দেখিয়েছে। সেই ভিডিও দেখার পর মনে হল, তালেবান-বোকোহারাম জঙ্গিগোষ্ঠী গোপন জায়গা থেকে যেমন ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে বিভিন্ন উস্কানি, নাশকতা এবং বিভিন্ন অপপ্রয়াস চালায়, তেমনি তাদের ভিডিওটি ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি। তাদের ভিডিও বার্তার ধরণ আর জঙ্গিদের ধরণ এক রকম। তারা কোন অশুভশক্তি, কোন রাজনৈতিক শক্তি, আমরা জানি না। সেটা বের করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সহায়তা করবো।’

উপাচার্যের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে মুখ খোলেন খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, উপাচার্যের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি কিংবা আওয়ামী লীগ একমত নয়। ওবায়দুল কাদেরের এই প্রতিক্রিয়া জানানোর পর এবং নানা মহল থেকে সমালোচনা ওঠায় আজ নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন উপাচার্য।

অন্যদিকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুধুমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে অবস্থান ও ঘোরাফেরা এবং কোনো ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিবেন।’

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের উদেশ্যে হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের পর্যবেক্ষণে রাখতে নির্ধারিত এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো হবে। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনবল দেওয়া হবে। তাদের কাজ হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যদের পর্যবেক্ষণ করা।’

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জন করেছে। উপাচার্য ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম উপাচার্য বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা না হওয়াটা দুঃখজনক।’

প্রসঙ্গত এর আগে গত ৮ জুলাই উপাচার্য দাবি করেছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা আর সাড়া দিচ্ছে না। তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে বাধ্য করার মতো একটি অশুভ তৎপরতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গেছে। সেটি হলো শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাশ করতে চায়। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা মানে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়ানো।’