এলডিসি উত্তরণে সাইড ইভেন্ট আলোচনায় বাংলাদেশ

জাতিসংঘের চলতি হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম (এইচএলপিএফ)-এ বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল ‘টেকসই উত্তরণের লক্ষ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণ-পথ নির্বিঘ্ন করতে স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে সহযোগিতা প্রদান’ শীর্ষক সাইড ইভেন্ট। নিউইয়র্কের স্থানীয় মিলেনিয়াম হিলটন হোটেলে রোববার স্থানীয় সময় অনুষ্ঠিত এই সাইড ইভেন্টে কী-নোট স্পিকার (প্রধান আলোচক) হিসেবে ব্ক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

জাতিসংঘ যখন বাংলাদেশকে এলডিসিভুক্ত করে তখন বাংলাদেশে ছিল নানা ধরনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। সেই প্রেক্ষাপট থেকে আজকের অবস্থানে আসতে কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে তা তুলে ধরেন।

এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে মুহিত বলেন, এটি নির্ভর করে সে দেশের সরকারের সদিচ্ছার উপর। এ ক্ষেত্রে এ বছর মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করার সাফল্যগাঁথার উদাহরণ টানেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, উত্তরণের অগ্রযাত্রায় আমরা প্রথমে হিসাব কষলাম- আমরা কোথায় ছিলাম, আমাদের দুর্বলতাসমূহ কী কী আর আমাদের কী কী ক্ষেত্রে সক্ষমতা রয়েছে। এরপর আমরা আমাদের নিজস্ব সীমিত সম্পদ, তহবিল ও কলা-কৌশল ব্যবহার করে এবং জনগণকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের দিকে পা বাড়ালাম। আমরা জাতিসংঘ প্রদত্ত গ্রাজুয়েশন ক্রাইটেরিয়া প্রথমবারের মতো পূর্ণ করলাম।

এটি স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য উদাহরণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশের মতো উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

উত্তরণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মুহিত। তিনি বিশ্বের অ-নবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে আরো সতর্ক হওয়ার জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উন্নয়নকে টেকসই করতে এ সকল প্রাকৃতিক সম্পদ পরবর্তী প্রজন্মও যাতে ব্যবহারের সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনায় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং স্বল্পোন্নত, ভূবেষ্টিত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি মিজ্ ফেকিতামোইলোয়া কাতোয়া ইউতোইকামানু বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ নির্বিঘ্ন করা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা নিশ্চিত করা গেলে উত্তরণ সম্পূর্ণভাবে সফল হবে। অর্থাৎ এটি হবে টেকসই। তিনি উত্তরণকে একটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার স্বাক্ষর হিসেবে অভিহিত করেন, যার মধ্যে দিয়ে দেশটির পর-নির্ভরতা হ্রাস পায়।

এসময় ভূটানের অর্থমন্ত্রী নামগে দরজী উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ভূবেষ্টিত দেশ ভূটানের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মালদ্বীপের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ড. আলী নাসির মোহামেদ ও ক্যাবো ভারদে’র স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জোসে লুইস ফিয়ালহো রোচা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানটিতে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। আরো বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম, ইউএনডিপি’র এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিয়াং ঝু, জাতিসংঘের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কমিশনের (ইউএন-এসকাপ) ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি কাভে জাহেদি, জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভোলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) প্রধান রোনাল্ড মল্লিরুস্।

উল্লেখ্য, ১৮ জুলাই মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণার মধ্যদিয়ে এবারের এইচএলপিএফ শেষ হবে। খবর: ইউএনবি।