আপনি পড়ছেন

খুলনা অঞ্চলে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির হার দিন দিন কমছে। উৎপাদন বাড়লেও বাড়ছে না রপ্তানি। অন্যদিকে খুলনা অঞ্চলে দেশীয় প্রায় নয় প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এসব মাছের অস্তিত্ব সংকট রোধে মৎস্য অধিদপ্তর অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, মরা নদীতে পোনা অবমুক্তসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

mative species of fish

সূত্র জানায়, গেল অর্থ বছরের তুলনায় খুলনায় হিমায়িত চিংড়ি, হিমায়িত মাছ (মিঠা পানি), হিমায়িত (সামুদ্রিক) ও বরফায়িত মাছ (কোল্ড ফিস), জীবন্ত কুইচ্ছা-কাঁকড়া, চিংড়ির খোসা এবং অন্যান্য মৎস্যজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৯৯ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা।

মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনা কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ক্রমপুঞ্জিত মৎস্য ও মৎস্য পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ২১৭ দশমিক ০৬৯ মেট্রিক টন, যার মূল্য ছিল ২ হাজার ৫৮৮ দশমিক ২৪ কোটি। আর ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২০০ দশমিক ৭৮৮ মেট্রিক টন, যার মূল্য ২ হাজার ৪৮৮ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা।

স্থানীয় বিশেষজ্ঞারা বলছেন, নদী ও সমুদ্রের আহরণকৃত এবং চাষে মাছের উৎপাদ বাড়লেও রপ্তানি কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এছাড়া এর সাথে সংশ্লিষ্ট যেমন- চাষী, শ্রমিক, ফড়িয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকায়ও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলদা, বাগদা, ক্যাট ফিশ, কার্প, ইলিশ, পারশে, ইল, বাইন, সল্ডটেড মাছ, ভেটকী, দাতিনা, কুইচ্ছা, কাঁকড়া, শুটকি- এসব প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়ছে খুলনা অঞ্চলে। এ ছাড়া রপ্তানি হচ্ছে ফিস স্কেল, হাঙ্গরের পাখনা ও চিংড়ির খোসা।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, খুলনায় বরাবরই মাছের উৎপাদন ভালো। প্রতি বছর চাহিদার অতিরিক্ত মাছ উৎপাদন হয়। বিশ্ব বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া, দাম কমে যাওয়া, রপ্তানি পণ্যেও গুণগতমান ঠিক না থাকাসহ বিভিন্ন কারণেই রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে। এ বিষয়গুলো শণাক্ত করাসহ সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।

মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গেল অর্থ বছরের তুলনায় মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে।’ মৎস্য রপ্তানির হার কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভেনামী চিংড়ির দাম অনেক কম হওয়ায়, আমাদের দেশে হিমায়িত চিংড়ির চাহিদা কমেছে। আর এজন্যই আমাদের দেশে বাগদা চিংড়ির রপ্তানি কমেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুটকি চট্টগ্রাম থেকে, কাঁকড়া (জীবন্ত) ঢাকা থেকে ও কাঁকড়া (নরম) খুলনা থেকে রপ্তানি হয়।’

এদিকে খুলনায় ৯ প্রজাতির দেশীয় মাছ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এসব মাছ হচ্ছে- শৈল, কৈ, শিং, চিতল, পাবদা, উলুসী টেংরা, গজাল, সরপুঁটি ও মাগুর। অতিরিক্ত দাবদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, বৃষ্টি, লবণাক্ততা ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এই ৯ প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এসব মাছের বংশ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে মৎস্য বিভাগ। এজন্য এ সব মাছের প্রজনন বাড়াতে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, বিলুপ্ত প্রায় নয় প্রজাতির মাছের প্রজনন বাড়াতে ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা নদী, মাড়ুয়ার খাল, মির্জাপুর মরা নদী, দিঘলিয়া উপজেলার হাতিয়ার খাল, তেরখাদা উপজেলার বাশুখালি, সালতিয়া ও আগরখালি খালে এসব মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এসব এলাকায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ৯০০ পরিবারকে সচেতন করতে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে তাদের প্রতিবেশীদেরও উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজীবাছা, সালতা ও চুনকুড়ি, দাকোপ উপজেলার শিবসা, মংলা বন্দর এলাকার পশুর, কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে চিংড়ি ও পারশের পোনা আহরণ করা হয়ে থাকে। এর ফলে ভেটকি, টেংরা, পায়রা, দাতনে প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে।

খুলনা মহানগরীর ফারাজি পাড়া এলাকার সেলিম আহমেদ বলেন, ‘এখন বাজারে গেলে দেশীয় কৈ মাছ পাওয়া কঠিন। হাইব্রিড মাছে বাজার সয়লাব। দেশীয় শিং ও মাগুর মাছও চিনে কেনা অসম্ভব ব্যাপার। হাইব্রিড মাছের আধিক্য অনেক বেড়ে গেছে।’ তাই এখন সামুদ্রিক মাছ কেনায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।

ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কুমার মল্লিক জানান, অভায়াশ্রম গড়ে তোলার পর স্থানীয় হাট বাজারে শৈল, কৈ, শিং, চিতল, পাবদা, উলুসী টেংরা মাছের সরবরাহ বেড়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও পোনা অবমুক্তকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারলে অস্তিত্ব সংকটে থাকা এসব মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন ডিসিপ্লিনারি প্রভাষক সুদীপ দেবনাথ বলেন, ‘অবাধে পোনা ধরা, নদী ভরাট, পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, মাছের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়াসহ নানা কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধি কমেছে। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নদী, খাল বিলের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে যা মাছের বংশ বিস্তারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।’

এ বিষয়ে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জেলার বিভিন্ন উম্মুক্ত জলাশয়ে প্রায় ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ২৯ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে, যা থেকে ১৪৮ মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদন হবে। এতে এ অঞ্চলের পাঁচ হাজার সুফলভোগীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ খবর: ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.