১৬ বছর বয়সেই চারটি বিয়ে করেছে এই কিশোর!

রানা মণ্ডল। বয়স মাত্র ১৬। আর এই বয়সেই চার চারটি বিয়ে করেছেন তিনি। এমনকি এরই মধ্যে তিন স্ত্রীকে তালাকও দিয়েছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ জুলাই স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরী ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে চারটি বিয়ে পূর্ণ করলেন এই কিশোর। রানা প্রথম বিয়ে করে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। মাত্র দেড় বছরে তিনটি সংসার ভেঙ্গে চতুর্থ সংসার বাঁধলেন তিনি। এতে এলাকায় রীতিমত হৈ-চৈও পড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, রানা মণ্ডলের বয়স মাত্র ষোল কি সতেরো হবে। কিন্তু স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে একের পর এক বিয়ে করে চলেছেন এই কিশোর। এ নিয়ে বিচার-শালিসও হয়েছে। নাবালক ছেলেকে বারবার বিয়ে দেয়ায় বাবা রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ মণ্ডলকে সোমবার আটক করেছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ মণ্ডলের ছেলে আলোচিত এই রানা। সোমবার বিকালে সরেজমিনে রানার গ্রামে তার পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রানা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। বর্তমানে তিনি মেহেরপুরে আছেন।

স্থানীয়রা জানান, রানা লেখাপড়া বেশি দুর এগুতে পারেনি। রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিক নির্বাহ করে। ২০১৭ সালের জানুযারি মাসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম বিয়ে করেন রানা। বিয়ের কয়েক মাস পর তার প্রথম সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীও নানা কারণে মাত্র ৫ মাসের মাথায় তাকে ছেড়ে চলে যায়। এর কয়েক মাস পর ফের দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে রানা তৃতীয় বিয়ে করেন। সে সংসারও টেকেনি। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ জুলাই ভেড়ামারায় মৌসুমী নামের এক স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করেন রানা।

এলাকার মাতব্বর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আলী আসমত জানান, ‘এর আগেও রানার বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার-শালিস হয়েছে। তারপরও এ কাম চলছেই। তারা কাউকে না জানিয়ে একের পর নাবালক ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে এ কাজ করে আসছে রানা ও তার পরিবারটি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই একটি জন্ম নিবন্ধন নেন রানা মণ্ডল। সেই জন্ম নিবন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। তবে বয়স প্রমাণের জন্য কোনো কিছু জমা দেয়া হয়নি ইউনিয়নে। ইউনিয়নের তৎকালিন চেয়ারম্যন খন্দকার টিপু সুলতান ও সচিবের অনুরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ইউসিডি কর্মী এ জন্ম নিবন্ধন রানার নামে ইস্যু করেন।

রানার বাবা কৃষি শ্রমিক রাশেদ মণ্ডল বলেন, ‘ছেলের জন্ম তারিখ আমার মনে নেই। তবে আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে ১১ বছর। মেয়ের থেকে ছেলের বয়স ৮ থেকে ৯ বছর বেশি। গত দেড় বছরে ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে জানিয়ে বলেন, 'প্রথম দুই বউ চলে যাওয়ার পর আমি বিয়ে দিতে চাইনি। তার মায়ের পিড়াপিড়িতে বিয়ে দিয়েছি।' বিয়ের আগে ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে সনদটি নিয়েছেন বলে জানান রাশেদ মণ্ডল।

রানা মণ্ডলের মা রেহেনা খাতুন রেনু বলেন, 'আমার ছেলের বিয়ে আমি দেব তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। ছেলে বিয়ে করতে চায় বিয়ে দিয়েছি, এখানে বাইরের লোকের এত মাথা ব্যথা কেন?

রানার সহপাঠি হৃদয় খান জানান, ‘রানা ও আমি এক সাথে পড়েছি। আমার এক বছরের বড় সে। আমি মাঝখানে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ায় আমার এক বছর গ্যাপ রয়েছে। সেই হিসেবে রানা আমার এক বছরের বড় হতে পারে। আমার বয়স এখন ১৬ বছর চলছে।

রানার দুসম্পর্কের খালাত ভাই বলেন,‘২০০৯ সালে আমরা দুজন ক্লাস টুতে পড়তাম। এরপর সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। আমি এ বছর এসএসসি পাশ করেছি।’ সেই হিসাবেও বয়সটা হয় ১৬ বছর।

ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুস সালাম বলেন, 'আমার সময়ে এ কাজ হয়নি। আগের চেয়ারম্যানের সময় সনদ জালিয়াতি করে কাজটি করেছে রানার পরিবার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি বলছে, বয়স না হওয়ায় ছেলেকে একাধিক বিয়ে দেয়ায় রানার পিতা রাশেদ মণ্ডলকে পুলিশ সোমবার রাতে আটক করেছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে বিয়ে পাগল রানা মণ্ডল। মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আহমেদ বলেন,‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ১৬-১৭ বছরের একটি ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে। খুবই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সনদ জালিয়াতি করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।