'কেউ মারা যায়নি, কেউ অবরুদ্ধ নয়, কাউকে ধর্ষণ করা হয়নি'

নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা সপ্তম দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে রাজধানীর জিগাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে শিক্ষার্থীরা দাবি করে, তাদের চারজন শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলা হয়েছে, কয়েকজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে আর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এটি ছিল মূলত গুজব।

সংঘর্ষ থেমে গেলে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ধানমন্ডির কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। প্রায় ৬/৭ জনের এই প্রতিনিধি দল পুরো কার্যালয় ঘুরে দেখে জানিয়েছে, সেখানে কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যলয়ে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। কিংবা কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা বলেন, 'এটা একটা গুজব।' তবে তারা দাবি করেন, অনেক শিক্ষার্থীই গুরুতর আহত হয়েছে।

সংঘর্ষ সম্পর্কে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কাজী হাসিবুর রহমান তুর্য বলেন, 'সকাল থেকেই সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আমরা অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। জোহরের নামাজের পর কে বা কারা বলে যে, রাজধানীর জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে। কথাটি শুনে উপস্থিত সকলে উত্তেজিত হয়ে যাই। এরপর সকল ছাত্র জিগাতলা মোড়ে আসি। এরপরই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।'

সরেজমিন জানা গেছে, বেলা ১২ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থী এবং পুলিশ ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলে। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০/২৫ জন আহত হয়। এরমধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন চোখে বড় ধরনের আঘাত পান। পাশাপাশি কয়েকজন ছাত্রীও আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগেরও কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের রাজধানীর পপুলার, জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের সংঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, 'তোমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একমত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই তোমাদের সকল দাবি মেনে নিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়ন হতে একটু সময় প্রয়োজন। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং প্রজ্ঞাপন জারি চাই।' শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের এই হামলারও প্রতিবাদ জানান।

এর আগে বিকাল চারটায় এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ঢাকার ধানমণ্ডির জিগাতলা এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করেছে।' এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে বলেন।