আপনি পড়ছেন

মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা তথা কুরবানির ঈদ। তবে এটা শুধু উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি এর রয়েছে ব্যক্তিগত ত্যাগ থেকে শুরু করে বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্ববোধের বৃহত্তর বার্তা। অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি প্রতি বছর আরবি ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ হালাল পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়।

kurbani importance

কুরবানি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু উৎসর্গ করাই কুরবানি। শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর নামে হালাল পশু জবাই করাকে কুরবানি বলে।

কুরবানির বিষয়ে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্য নামাজ পড়ুন আর কুরবানি করুন। (সুরা কাউসার, আয়াত-২)

কুরবানির বিধান যুগে যুগে আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে অবতীর্ণ সমস্ত শরিয়তেই বিদ্যমান ছিল। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য একটা কুরবানি নির্ধারিত করেছি যেন তারা আল্লাহর নাম নেয় তার প্রদত্ত বাকশক্তিহীন চতুষ্পদ পশুগুলোর উপর। অতএব, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্যই, সুতরাং তারই সম্মুখে আত্মসমর্পণ করো এবং হে মাহবুব! সুসংবাদ শুনিয়ে দিন সেই বিনীত লোকদেরকে।(সুরা হজ্জ,আয়াত-৩৪)

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কুরবানি করেছিলেন হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল। কুরবানি একটি আর্থিক ইবাদত। প্রত্যেক স্বাধীন মুসলমান, মুকিম, সক্ষম তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে কুরবানি করা ওয়াজিব। প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা জবাই করতে পারবে অথবা উট বা গরু-মহিষ এক থেকে সর্বাধিক সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে জবাই করতে পারবে। দরিদ্র ও মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমসমূহের মধ্যে অন্যতম হল কুরবানি। মূলতঃ একারণেই প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতি বছর কুরবানি করতেন। আর সামর্থবান ব্যক্তিরা কুরবানি বর্জন করলে তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বে কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (ইবনে মাজাহ শরিফ)

কুরবানির ফজিলত অর্জন করতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন ওই ধরনের আবেগ-অনুভূতি ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করার মনোভাব যা ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ.) মধ্যে। কেবল রক্ত প্রবাহিত করা ও গোশত খাওয়ার নাম কুরবানি নয়। বরং আল্লাহর দরবারে নিজের যাবতীয় জানমাল বিলিয়ে দেয়ার এক প্রেমময় শপথের নাম কুরবানি।

কেবল আনুষ্ঠানিকতার জন্য কুরবানি করার মধ্য কোনো সাওয়াব নেই। অতএব যে কুরবানি সাথে তাকওয়া নেই, আত্মোৎসর্গের অনুভূতি নেই, আল্লাহর দরবারে সেই কুরবানির কোনো মূল্য নেই। তাকওয়াপূর্ণ ইবাদতই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কুরবানি কবুল করেন। (সূরা আল মায়িদাহ-২৭)

হাদিসের আলোকে কুরবানির অনেক ফজিলত রয়েছে। হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! এ কুরবানির প্রথা কী? তিনি এরশাদ করেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নাত। তারা আবার জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কী কল্যাণ নিহত আছে? তিনি বললেন, পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞেসা করলেন, বকরীর পশমেও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন, বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে। (মিশকাত শরিফ)

অন্য হাদিসে রয়েছে, হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,আল্লাহর নিকট কুরবানি দিনে আমল সমূহের মধ্যে (ফরজ কাজ ব্যতীত) রক্ত প্রবাহ (কুরবানি) হতে অধিক প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ পাক কুরবানি পশুকে তার শিং,পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করবেন। আর কুরবানির পশুর রক্ত জমিনে গড়িয়ে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা খুশি মনে কুরবানি কর।(তিরমিযি শরিফ)

আলোচ্য হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয় কুরবানি একটি হলেও উহার প্রতিদান অনেক বেশি। কেউ সকাল-সন্ধ্যা তা গণনা করলেও কুরবানির পশুর শরীরের কেশ কত তার কোনো হিসাব বের করা সম্ভব নয়। সহজে এতো অধিক সওয়াব অর্জন করার বিকল্প পন্থা জগতে বিরল। অতএব, সামর্থ্যবান ও সম্পদশালীদের উচিত নিজের কুরবানি পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের জন্যও কুরবানি করা, যেন তারাও এই সওয়াবের অংশীদার হতে পারে। যদি সম্ভব হয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ হতে কুরবানি করার বিশেষ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি কুরবানি করা থেকে বিরত থাকবে সে যেন এ মহান নিয়ামত হতে বঞ্চিত থাকবে।

লেখক: মুহাম্মদ এমদাদুল হক জাবের
ফাজিল অনার্স তৃতীয় বর্ষ
আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর